হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি
পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
এক সময় শীতের সকালে গ্রামবাংলার অনেক ঘরে ঢেঁকির শব্দে ঘুম ভাঙত মানুষের। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন ঢেঁকির জায়গা দখলে নিয়েছে মেশিন।
শীত আসলেই ভাপা পিঠা আর আটা খুটার প্রতিযোগিতা চলত গ্রামের ঘরে ঘরে। কেউ পিঠার দোকানে কেউবা বাড়িতে পিঠা উৎসবে নতুন জামাই বেটিকে দাওয়াত করত পিঠা খেতে। খবর সমকাল অনলাইন
ভোরবেলা থেকে শুরু করত গ্রামের নারীরা ভাপা আর চিতই পিঠা বানাতে। গরমাগরম ভাপা আর চিতই পরিবেশন হতো গ্রামের ঘরে ঘরে।
এক সময়ের প্রচলিত এই ঢেঁকি এখন কালের বিবর্তে হারাতে বসেছে। ঢেঁকিতে আটা খুটা দেখতে হলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে খুঁজে খুঁজে দেখতে হয় কোথায় ঢেঁকি আছে।
তবে ঢেঁকির প্রচলন উত্তরাঞ্চলে বেশি প্রচলিত থাকলেও এখন হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র!
শস্যভান্ডারের জেলা দিনাজপুরেও দেখা মেলে না এই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকির।
শীত আসলেই ভাপা পিঠার ব্যবসা শুরু করেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রেল ব্রিজ এলাকার মো. হোসেন আলী।
যদিও ঢেঁকিতে পাড় দেওয়ার কাজ মেয়েদের কিন্তু কাজটা একটু কঠিন হওয়ায় ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছেন হোসেন আলী।
হোসেন আলী ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছেন আর তার মেয়ে মোছা. হোসনে আরা আটা চালাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ১০ থেকে ১৫ কেজি চালের আটা গুঁড়ো করতে পারেন তারা।
ঢেঁকিতে কোটা আটার পিঠা সুস্বাদু হওয়ায় কদরও আছে বেশ।
হোসেন আলী বলেন, শীতের সময় ভাপা পিঠার দোকান করি। অভাবী সংসারে ভাপা পিঠা বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করতে পারি। এই কাজে আমাকে সাহায্য করেন আমার মেয়ে এবং স্ত্রী।
ঢেঁকিতে পাড় দেওয়ার পর গুঁড়ো আটা চালতে হয়। সেই আটা চালার কাজটাই করেন মোছা. হোসনে আরা।
হোসনে আরা বলেন, ‘সকাল থেকে ঢেঁকিতে আটা কুটি। আটা গুঁড়ো করার পর আমরা সেগুলো চালান দিয়ে সন্ধ্যার সময় ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা বানাই। শীতের সময় ভাপা আর চিতই পিঠা বানিয়ে আমাদের সংসার চলে।’
ঢেঁকিতে আটা পাড় দেওয়া দেখতে অনেকেই আসেন। ঢেঁকি দেখতে পেয়ে ছবি তুলছেন চিরিরবন্দরের মাহফুজুল ইসলাম আসাদ।
তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর ঢেঁকি দেখতে পেলাম। যদিও আমরা গ্রামে বসবাস করি কিন্তু ঢেঁকি আর চোখে পড়ে না। এখানে ঘুরতে এসে ঢেঁকি দেখতে পেয়ে ছবি তুলে রাখছি, যাতে এই ঢেঁকির স্মৃতি ধরে রাখতে পারি।’