দায়িত্ব পেয়েই কী সোলাইমানি হত্যার বদলা নিলেন জেনারেল কানি?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারী ২০২০ ১২:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬০ বার।

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস বাহিনীর নতুন প্রধান পদে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানিকে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী। ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির বহুদিনের সহযোদ্ধা ও কুদস বাহিনীর ডেপুটি ছিলেন তিনি।

গত শুক্রবার তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েই সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের জন্য ইরান ‘চরম প্রতিশোধ’ নেয়ার যে অঙ্গীকার করেছে তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন জেনারেল কানি।

১৯৮০ সালে তিনি দেশটির ‘ইসলামিক রেভুল্যুশনারি গার্ড কোর’ বা আইআরজিসিতে যোগ দেন। এর এক বছর আগে ইরানে ইসলামী বিপ্লব শুরুর পর দেশটির ইসলামী শাসনব্যবস্থার নিরাপত্তার জন্য এই বাহিনী গঠন করা হয়।

সোলেইমানির মতোই সাদ্দাম হোসেনের শাসন আমলে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলমান রক্তক্ষয়ী ইরান-ইরাক যুদ্ধের অংশগ্রহণকারী অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা তিনি।

কাসেম সোলাইমানিকে স্মরণ করে জেনারেল কানি বলেছেন, সেই যুদ্ধের কঠিন প্রতিকূলতার সময় তাদের বন্ধুত্বের জন্ম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধে সন্তান’।

জেনারেল সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘শহীদ সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নামে প্রতিশ্রুতি নিচ্ছি। নিশ্চিতভাবেই সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

কানিকে কমান্ডার নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, কুদস বাহিনীতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে না। যদিও প্রশ্ন উঠছে যে, সোলাইমানির মতো এত প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন কি-না জেনারেল কানি।

গত শুক্রবার মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে বুধবার ভোররাতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন বিমানঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদ’দে হামলা চালায় ইরান। একের পর এক ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ঘাঁটিটিকে গুঁড়িয়ে দেয় ইরানি সামরিক বাহিনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধে প্রথম ধাপে জেনারেল কানি।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব জোরদার করার জন্য কাজ করতেন সোলাইমানি। সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

ইরানিরা তাকে হিরোর মর্যাদা দেয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির পরই তাকে ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে জেনারেল কানির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তার পূর্বসূরির সমতুল্য নজির প্রতিষ্ঠা করা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু একক ব্যক্তি বিশেষের ওপরে রেভুল্যুশনারি গার্ডের শক্তি নির্ভর করে না। ওয়াশিংটনে আরব ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলি আলফনেহ লিখেছেন, ‘সোলেইমানির মতো চৌকস পূর্বসূরির সমতুল্য নেতৃত্বের নজির প্রতিষ্ঠা করা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা কানির মতো একজনের পক্ষে খুব কঠিন হবে’।

‘তারপরও কুদস বাহিনীর যে শক্তি সে কারণেই কানি প্রভাব বিস্তার করবেন।’

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক আফশন অস্টোভার এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘কানি খুব জোরের সঙ্গে অগ্রসর হবেন’।

টুইটে তিনি লিখেন, ‘অনেক বিশেষজ্ঞ যতটা মনে করেন, আইআরজিসি শুধু একক ব্যক্তি বিশেষের ওপর তার চেয়ে অনেক কম নির্ভরশীল। সোলাইমানির মৃত্যু অবশ্যই একটি প্রভাব ফেলবে কিন্তু তাতে ইরানের আঞ্চলিক কর্মকাণ্ডে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতো কোনো পরিবর্তন ঘটবে না’।