পুষ্টিকর খাবার পায় না তিন কোটি মানুষ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারী ২০২০ ০৬:০৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৫ বার।

চাল ও আটাসহ শর্করা জাতীয় খাবারের পেছনে দৈনিক একজন বাংলাদেশির খরচ হয় ৮০ টাকা। পুষ্টিকর খাবার খেতে হলে তাকে কমপক্ষে খরচ করতে হবে ১৭৪ টাকা। দ্বিগুণ ব্যয়ে পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই দেশের ১৩ শতাংশ পরিবার বা খানার। আর দেশের মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় ভাত ও আটা খাচ্ছে বেশি। এক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয়ের কারণে পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারছে না দেশের ২১ শতাংশ পরিবার, যার সংখ্যা সাড়ে তিন কোটিরও বেশি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আওতায়  ‘বাংলাদেশ : পুষ্টির ঘাটতি পূরণ’ শিরোনামে করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর দেশ রুপান্তর 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুষ্টিকর খাবারের দাম অনেক বেশি। শর্করানির্ভর খাবার কিনতে যে টাকা খরচ হয়, পুষ্টিকর খাবার খেতে খরচ করতে হয় তার দ্বিগুণ। আর মধ্যম মানের খাবার খেতে দিনে একজনের ব্যয় হয় ২০৪ টাকা। ১০টি ভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে প্রত্যাশিত পুষ্টিকর খাবারের তালিকা করা হয়েছে। তাতে মাছ, মাংস, ভোজ্যতেল, দুধ, সবজি, ফল-মূল, খাদ্যশস্য, বিভিন্ন ধরনের আলুকে পুষ্টিকর খাদ্য তালিকায় রাখা হয়েছে। আর শর্করানির্ভর খাদ্য বলতে চাল ও আটা বুঝানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

ডব্লিউএফপি প্রতিবেদনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। চূড়ান্ত এ প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। সেখান থেকেই বাংলাদেশের মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে এসব তথ্য জেনেছে দেশ রূপান্তর।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ভাতে ক্যালোরি বেশি রয়েছে। তাই ক্যালোরির পেছনে বাংলাদেশিদের খরচ কম। কিন্তু পুষ্টিকর খাবারের দাম বেশি। বিশেষ করে মাছ ও মাংসের মতো পুষ্টিকর খাবার খুবই ব্যয়বহুল।

ডব্লিউএফপি বলেছে সময়, জ্ঞান, খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের অনেকেই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে। যখন দেশের প্রতিটা পরিবার পুষ্টিকর খাবার খেতে আগ্রহী হবে, তখন দেশের ১৩ শতাংশ পরিবারের পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারবে না সামর্থ্যরে অভাবে। বাংলাদেশের মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো ও কেনার অসামর্থ্য অবস্থার জন্যও দায়ী। বাংলাদেশের মানুষ মাত্রাতিরিক্ত ভাত খায়। গড়ে দৈনিক একজন ৩৬৭ গ্রাম চালের ভাত খায়। চালের পেছনে বাড়তি খরচ হিসাব করলে পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য হারায় ১৭ শতাংশ পরিবার। দেশের ২১ শতাংশ পরিবার পুষ্টিকর খাবার পায় না। ভাত খাওয়া কমিয়ে কম দামের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সম্ভব। দৈনিক মিষ্টি বা স্ন্যাক খাওয়ার অভ্যাস বাংলাদেশিদের পুষ্টিকর খাবারের পেছনে ব্যয় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এ কারণেই ৪১ শতাংশ পরিবার পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তৈরি করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাংলাদেশিদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কারণ, মিষ্টি, স্ন্যাকসহ তৈরি করা খাবারের দাম বেশি। অধিক সময় ধরে সিদ্ধ করায় রান্নার সময়ই খাবার থেকে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি পরিবারের আয় সামান্য কমে গেলেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের ওপর।

বাংলাদেশিদের জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বয়স ও লিঙ্গভেদে বাংলাদেশিদের পুষ্টিকর খাবারের পেছনে ব্যয় বিভিন্ন রকম। বাংলাদেশে কিশোর বয়সে পা দেওয়ার আগে ও কিশোর সময়ে নারী-পুরুষের পুষ্টি গ্রহণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী শিশুদের খাবার খরচ খুবই কম। যদিও এই সময়টায় তাদের প্রাণিজ মাংস, দুধ, তাজা ফলমূল, সবজি ও ফর্টিয়াইড খাবার বেশি প্রয়োজন। ওই বয়সী শিশুদের এ ধরনের খাবার জোগান দেওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিকর খাবারে দিনে ব্যয় ২১ টাকা, দুই বছরের নিচে হলে দৈনিক ব্যয় ১০ টাকা। ৫ বছর বয়সী শিশুদের পুষ্টিকর খাবারের পেছনে দৈনিক ব্যয় ২২ টাকা, স্কুলগামীরা খায় দৈনিক ২৩ টাকার পুষ্টিকর খাবার। প্রাক-কিশোর বয়সী মেয়ে দিনে ৪৬ টাকা ও ছেলে ৪১ টাকা, কিশোরদের জন্য দিনে ৪৮ ও কিশোরীদের জন্য ৪৯ টাকা, যুবক-যুবতী ও মধ্যবয়সীদের জন্য দৈনিক ৪৪ টাকা এবং বয়স্ক নারী দৈনিক ৪০ ও বয়স্ক পুরুষ ৪৩ টাকার পুষ্টিকর খাবার খায়।