ভৌতিক গল্পঃ অ-মানবী [দ্বিতীয় পর্ব]

সাজিয়া আফরিন সোমা
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:২২ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৫৬৫ বার।

কাউকে না পেয়ে পল্লব ফিরে এলো- পল্লবঃ এমন কি করে হলো? স্পষ্ট শুনলাম দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দটা।
রুমাঃ হ্যা আমিও তো শুনেছি পরিষ্কার,আর ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠেছি। 

কথা শেষ হবার আগেই নাকী সুরে কান্না শুনতে পেলো দুজনই। গা ছম ছম করে উঠে ওদের। কোথায় থেকে কান্নার শব্দ আসছে বোঝা যাচ্ছে না,কখনও মনে হচ্ছে বাইরে থেকে কখনও মনে হচ্ছে পাশের ঘর থেকে। আবার হঠাৎ ই মনে হচ্ছে তাদের খুব কাছেই বসে কেউ কাঁদছে। খুব কষ্ট নিয়ে কাঁদছে। এবার আর দুজনের কারোই সাহস হলোনা ঘর থেকে বের হওয়ার। কারন কান্নার আওয়াজটা সাধারন মানুষের থেকে একটু আলাদা! হঠাৎ করেই বাড়ির চারপাশে অনেক পাখির চিৎকার শুরু হয়ে গেলো। বেশীর ভাগই অচেনা পাখি। এমন ভয়ঙ্কর হয় পাখিদের চিৎকার সেটা জানা ছিলো না। সারাটা রাত জেগে জেগে কেটে যায় দুজনের।  

সকাল হতেই পল্লবের মনের সব বাজে চিন্তা দূর হয়ে যায়। পল্লব মনে মনে ভাবে সব মনের ভুল। 

এদিকে রুমার মাথা থেকে কোন ভাবেই রাতের ঘটনা বের হচ্ছে না। বাড়ির বুয়ার সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করে বাড়ি সম্পর্কে - 

রুমাঃ শেফালী বুয়া,তুমি এই এলাকায় কতদিন ধরে থাকো? 

শেফালীঃ ১০ বছর পার ভাবী। 

রুমাঃ আগে এ বাসায় কখনও কাজ করেছো 

শেফালীঃ এ বাসায় বহু দিন কোন লোক ছিলো না,কার কাজ করবো? আর নিচে যারা থাকে তারা মানুষ দিয়ে কাজ করায় না। আগে এক নতুন বউ- জামাই ভাড়া নিছিলো,কেউ বলে বউটা পালাই গেছে কোন এক পোলার সাথে,আর তখন জামাইটা পাগল হয়ে গেছে। আবার কেউ বলে জামাইটা মাইরা ফালাইছে বউটারে। 

রুমাঃ মেরে ফেললে লোকে জানতো না? লাশ থাকবে না? 

শেফালীঃ লোকে বলে তাই শুনি। আর বউডা নাকি খুব সুন্দরী ছিলো,ছাদে উঠতে দেখছে যে দুই একজন তারা আজও নাকি ভুলতে পারেনি। 

রুমাঃ  কিন্তু  তারপরে এতোদিন আর কোন লোক উঠলো না কেনো এই বাড়িতে? 

শেফালীঃ তা বলতে পারিনা। তবে এলাকার লোকে নানান কথা বলে বাড়ি ভাড়া হইতে দেয়না। বাড়ির মালিক খুব ভাল মানুষ সেটাও লোক মুখে শোনা। তবে তারাও খুব একটা আসে না।

 রুমা মনে মনে ঠিক করে নেয় নিচতলায় লোক এলেই পরিচিত হয়ে এই বাড়ি সম্পর্কে শুনবে ওদের কাছে। বুয়াকে বিদায় দিয়ে নিজের ঘর গোছাতে লাগলো রুমা,আচমকা ঝন ঝন করে কিছু পড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ,কোন ঘরে সেটা বোঝা গেলো না। রুমা পাশের বেড রুমে গেলো,সেখানে সব ঠিক আছে। এবার রুমা বসবার ঘরে গেলো,গিয়ে দেখে পল্লবের সবচেয়ে পছন্দের ছবি নিচে পরে আছে, কাঁচ ভেঙ্গে সারা ঘর হয়ে আছে! কি করে এমন হলো। ছবিটা হাতে নিলো রুমা,মনটাই খারাপ হয়ে গেলো তার। এতো সুন্দর তাদের বিয়ের ছবিটা অথচ আটকানোর ব্যবস্থা কত হালকা,যে বন্ধ ঘরেই আপনা আপনি পরে যায়! রুমা ভাবতে ভাবতে বাধানোর হুকটা দেখতে উল্টিয়ে ফেলে ওটা। কিন্তুু পেছনের বাধন তো একেবারে ঠিক আছে। তাহলে তো কোন ভাবেই পরার কথা না? পরে গেলো কি করে?! কি সব হচ্ছে এগুলা! 

হঠাৎ মনে হলো পেছনে ওর গা ঘেসেই কেউ দাঁড়িয়ে আছে,বিশাল ছায়া। কে? বলেই পেছনে তাকালো রুমা। নাহ্ কেউ না। পুরো বাড়িতে তো সে একা! দরজা বন্ধ, কে আসবে তাহলে? 

পল্লব এলে সব শুনে,দেখে বলে- বাতাস ছিলো তাই হয়তো পরে গেছে ওটা। 

রুমাঃ পাখিরা বাসা বেধেছে জানালার কার্নিশে,বাচ্চাও ফুটিয়েছে এদিকটায়,সে জন্য জালালা খোলাই হয়না ওদের বাসা ভেঙ্গে যাবে বলে। বাতাস আসবে কোনদিক দিয়ে? আর এদিকটা খুব একটা আসাও হয় না। 

পল্লবঃ লাগানোটা মনে হয় ঠিক ছিলো না। থাক যেটা ভেঙ্গেছে সেটা নিয়ে এতো কথা বলে কি লাভ?  

রুমাঃ হু সেটাই। 

আজ পল্লব সব দরজা,জানালা নিজেই বন্ধ করে শুতে এলো 

পল্লবঃ রুমা? পাশের বেডরুমের জানালার ঘেসে ওটা কি গাছ? 

রুমাঃ ওখানে তো কোন গাছ নেই,পেছনের বাড়িগুলোতে যাওয়ার রাস্তা আর ড্রেন ওদিকে। 

পল্লবঃ আমি জানালার সাথেই খেজুর গাছ দেখেলাম যে? আলো নিভানোর পর তো খেজুর গাছের ছায়ায় মনে হলো? 

রুমাঃ ভুল দেখেছো। কোন গাছই নেই ওদিকটায়। আমি তো প্রায় ওদিকের জানালায় বসি। খুব সরু একটা রাস্তা ওটা। 

পল্লবঃ হতে পারে,কিন্তু আমি দেখেছি,জানালায় গাছের ছায়া। আর সেটা একেবারে জানালা ঘেসে! 

আর কথা না বাড়িয়ে দুজনই ঘুমাতে যায়। বিছানায় দুই দিকে পাশ ফিরে শুয়ে আছে দুজন, এ বাড়িতে আসার পর থেকেই দূরত্ব যেনো বেড়েই যাচ্ছে,প্রয়োজন ছাড়া কথা হয়ই না বলা যায়। রুমা দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবছে নিজেদের কথা,পল্লব এতোক্ষনে ঘুমিয়ে পরেছে। 

এখানে আসবার আগে তারা কত জায়গায় ঘুরতো ছুটির দিনে তো বাড়িতেই থাকতো না। সারাদিন ঘোরাঘুরি। এটা নতুন শহর তাদের কাছে,ঘোরাঘুরির অনেক জায়গা। অথচ মাস পার হয়ে গেছে কোথাও যাওয়াই হয়নি। এখানে আসার পর থেকে পল্লবের মেজাজটাও কেমন খিটমিটে হয়েছে। কাজের চাপেও এমন হতে পারে,শুয়ে শুয়ে ভাবে রুমা। 

সুন্দর একটা গন্ধ আসছে। পারফিউমের গন্ধ,নাকি কোন ফুলের? এতো রাতে ফুলের গন্ধে মাথা ধরে যায়। আবার রাতটাকে কেমন জানি মায়াবী মনে হচ্ছে রুমার কাছে। আজও কি কেউ কাঁদছে? হ্যা একটু একটু করে কান্নার আওয়াজ বাড়ছে,বেড়েই যাচ্ছে। রুমার পুরো শরীর ভয়ে কাঁপছে। এসব কি হচ্ছে প্রতিদিন! রুমা চোখ বন্ধ করে দুই হাতে কান চেপে ধরে বিছানায় পরে থাকে। ওদিকে পল্লব ঘুমে বিভোর।