ডিভোর্সের পর যেদেশে ধুমধামে পার্টি করে নারীরা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারী ২০২০ ০৯:৫৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮০ বার।

অধিকাংশ দেশে বিচ্ছেদ মানেই নারীদের কাছে অসহনীয় এক পৃথিবী। বিচ্ছেদ মানেই তার ‘জীবনের শেষ’। আবার এই পৃথিবীরই একটি দেশ মৌরিতানিয়া, যেখানে এসবের কোনো বালাই নেই। বিচ্ছেদের পর নারীদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তার পরিবার।

তুরস্কের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডে মৌরিতানিয়ার এই বিচ্ছেদ প্রথার বিস্তারিত জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনে দিনে নারীদের এই আয়োজন আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

স্বামীর ঘরের ‘যন্ত্রণা’ পেরিয়ে নিজের ঘরে মেয়েরা আরেকবার ফিরে আসার সুযোগ পাওয়ায় দেশটিতে এভাবে বিচ্ছেদ উদ্‌যাপন করা হয়। পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিষয়টি স্বাভাবিক চোখে দেখেন। তারা মনে করেন, ভালোর জন্যই মেয়ে ফিরে এসেছে।

এই ফিরে আসাকে তারা ‘কলঙ্কমুক্ত’ জীবনের সুযোগ হিসেবেও দেখেন। তাই একটি ব্যর্থ সম্পর্কের ইতি ঘটায় তারা আনন্দে ভেসে যায়। পাড়া কিংবা গ্রামের অন্যরা সেই আনন্দে শামিল হন। সব আয়োজন শেষ হলে বিচ্ছেদী নারী অবিবাহিতদের কাতারে চলে যান।

যেভাবে হয় আয়োজন: ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে সন্তানদের নিয়ে মায়ের বাড়িতে ফেরেন নারীরা। ফেরার দিন মা এবং বোনেরা জাগুরতার (আনন্দের কান্নাকাটি) শব্দে মেয়েকে স্বাগত জানান। চারদিক ভেসে যায় সুরের মূর্ছনায়।

পরিবারে আয়োজন শেষ হলে তার বান্ধবীরা গানের আসর বসায়। সেখানে নতুন কবিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, যারা নতুন জীবনে ফেরা নারীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করে আবৃত্তি করেন।

মৌরিতানিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে নারীর বিচ্ছেদ উদ্‌যাপন করতে অবিবাহিত কোনো ছেলেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর উদ্দেশ্য ডিভোর্স দেওয়া স্বামীর হিংসা জাগানো। তিনি কীভাবে এমন ‘সুন্দর’ একজন মেয়েকে ডিভোর্স দিতে পারলেন, সে কথা এই পার্টির মাধ্যমে তাকে জানানো হয়।

পুরুষের চোখে নারী: মৌরিতানিয়ার পুরুষেরা ডিভোর্সি নারীকে অবিবাহিত নারীদের মতোই মনে করে। এসব নারীকে অনেকে কবিতায় তুলে ধরেন।

মৌরিতানিয়ার মানুষের জীবনে কবিতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। সন্ধ্যার পর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কবিতার আসর বসান। সেখানে তিনবার বিশেষ চা সরবরাহ করা হয়। প্রথমবারের চা একটু তেতো স্বাদের। পরের দুইবার মিষ্টি। এই আসরে তরুণ লেখকেরা সবাইকে কবিতা পড়ে শোনান।

অল্প বয়স থেকে দেশটির শিশুদের কবিতা লেখার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মরফোলজি, সিনট্যাক্স, ইনফ্লেকশন-সহ সাহিত্যের খুঁটিনাটি সব শেখানো হয়। শেখানো হয় বক্তৃতার কৌশল।

কীভাবে এসব শুরু হল: মৌরিতানিয়ার ঐতিহ্য নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা আহমেদ ওলদ হারুদ টিআরটিকে বলেন, উপজাতিদের পুরোনো প্রথা থেকে এসব এসেছে। আগেকার দিনে অল্প কয়েকটি উপজাতিদের বসবাস ছিল দেশটিতে। অসম বর্ণে বিয়ে হতো না। কাজিনের মতো আত্মীয়র সঙ্গে নারীদের বিয়ে দেওয়া হতো। বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হতো।

কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। তারা বুঝতে শিখেছে, নারীদের জীবন কঠিন হয়ে গেলে অন্যদের ওপর তার প্রভাব পড়ে। দেশটিতে নারীরা একাধিক বিয়ে করলে কোনো সমালোচনা হয় না।

মরিয়ম বিন আহমেদ সালেম নামের এক নারী টিআরটিকে বলেন, ‘আমার কিছুদিন আগে বিচ্ছেদ হয়েছে। আর করার ইচ্ছা নেই।’ তিনি ‘খুব ভালো আছেন’ বলে জানান।

বিচ্ছেদের এই উদ্‌যাপনে নারীরা ভালো থাকলেও পুরুষদের হয় বিপত্তি। ডিভোর্সের হার গত কয়েক দশকে দেশটিতে বেড়েছে। ডিভোর্সি পুরুষকে নারীরা আবার বিয়ে করতে চায় না। অন্যদিকে ডিভোর্সি নারীকে ‘অভিজ্ঞ’ মনে করে অবিবাহিত পুরুষেরা। তাদের ধারণা, যার ডিভোর্স হয়েছে সে সংসার সম্পর্কে ভালো বোঝে। সব সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তার বেশি।

মৌরিতানিয়ার ২০১৮ সালের এক সরকারি রিপোর্টে বলা হয়, এক তৃতীয়াংশ বিয়ে ডিভোর্সের পরিণতি পেয়েছে।

জরিপে বলা হয়, ৭৪ শতাংশ নারী আবার বিয়ে করেছেন। ২৫ শতাংশ বিয়ে করেনি। ৭ শতাংশ নারী তিন কিংবা তার বেশিবার বিয়ে করেছেন।