২৫ দেশে রপ্তানি হচ্ছে কুমিল্লার কচুর লতি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারী ২০২০ ০৫:৫৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০২ বার।

কুমিল্লার বরুড়ার উপজেলার কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে পুষ্টিকর সবজি কচুর লতি। কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অর্থকারী ফসল থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে দারুণ অবদান রাখছে।

এমনিতেই দেশের মানুষের কাছে কচুর লতি একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর সবজি হিসেবে বিবেচিত। একই সঙ্গে অল্প খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠায় এখানে কচুর লতির আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক মঞ্জু মিয়া জানান, এক বিঘা কচু চাষে তাদের খরচ হয় হাজার বিশেক টাকার মতো। যা কচুর লতি বিক্রি করেই ওঠে আসে সেই খরচ। লাভের অংশ হিসেবে প্রতি বিঘা জমির কচু বিক্রি করা যায় ন্যূনতম ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।

অন্যদিকে সবজিটির প্রচুর চাহিদা থাকায়, জমি থেকে তুলে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে নেওয়া মাত্রই তা বিক্রি হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানকার বাজারগুলো থেকে প্রতিদিন এসে কচুর লতি কিনে নিয়ে যান।

কাদবা এলাকার কৃষক মিলন মিয়া জানান, তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে এ কচুর আবাদ করছেন। এ ফসল আবাদ করে কখনো তার লোকসান হয়নি। দেখাদেখি অন্যও কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে এ কচুর লতি চাষ করায় পুরো এলাকায় এখন কচুর লতির গ্রামে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরুড়ার শরাফতি, মগুজি, কসমি, নিশ্চিন্তপুর, পুরাতন কাদবা, বরাইপুর, যশপুর, পেনুয়া, পাক্কামোড়া, লইপুরা, করিয়াগ্রাম, হুরুয়া, পাঠানপাড়া, লক্ষ্মীপুর, ঝাঁলগাও, নয়নতলা, পোনতলা, বাতাইছড়ি, খোশবাসসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চাষ হচ্ছে কচুর লতি।

যশপুর গ্রামের প্রথম উদ্ভাবিত এ লতি শুরুতে ২-১ জন কৃষকের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এখন পার্শ্ববর্তী উপজেলা বুড়িচং-এর নিমসার, সদর উপজেলার কালিরবাজার, কমলাপুর, মনষাসন, হাতিগাড়া, কৃষ্ণপুর, জাঙ্গালীয়া, সদর দক্ষিণের বাগমারা, ভূশ্চি, লালমাই, চান্দিনার পিহর, মাইজখার, ছায়কোট, রামমোহনসহ বিভিন্ন গ্রাম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে লতি।

এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস মৌসুম হলেও সারা বছর লতির ফলন পাওয়া যায়। পাইকার মুমিন ও রনি বলেন, বরুড়ার বাতাইছড়ি লতির বাজার থেকে সিজন টাইমে প্রতিদিন ৬০-৭০ টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা। বর্তমান কৃষকদের কাছ থেকে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি লতি ২৫-৪০ টাকা দরে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

কুমিল্লার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, এখানকার মাটি কচুর লতি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই লতি আবাদ হচ্ছে। চলতি বছর উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে কচুর লতি আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে গোবর, ডিএপি, পটাশ, জিপসাম, ইউরিয়া বাবদ ১৮-২২ হাজার টাকা খরচ করে লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৩-৪ হাজার কেজি কচুর লতি পেয়ে থাকে কৃষকেরা।