ঢাবির হলে ৪ শিক্ষার্থীকে রাতভর রড, স্ট্যাম্প, লাঠি দিয়ে পেটাল ছাত্রলীগ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারী ২০২০ ১১:৫৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮৭ বার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে রাতভর রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের পর আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থী হ‌লেন- মনিনুল হক চৌধুরী (টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ২য় বর্ষ), সানোয়ার হোসেন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ৩য় বর্ষ), মিনহাজ উদ্দিন (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ২য় বর্ষ), আফসার উদ্দিন (আরবী বিভাগ, ২য় বর্ষ)।

নির্যাতনের ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন জড়িত বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১ টার দিকে জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের নিয়মিত ‘গেস্টরুম’ চলছিল। মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদের নামে শিবির কর্মী হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য মুকিমকে মানসিক চাপ দিতে থাকে। সে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তারা। পরে তার ফোনের চ্যাটলিস্ট দেখে সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধর সহ্য করতে না পেরে তারা উভয়েই মেঝেতে শুয়ে পড়ে। এর একটু পর মিনহাজ উদ্দীন ও আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত দুইটা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতারা।

রাত ২টার পর তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

ছাত্রলীগের নেতারা দাবি, তাদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তারা কোন বইয়ের নাম অথবা প্রমাণ দিতে পারেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা হল প্রশাসনের মাধ্যমে এ বিষয়ে অবহিত হয়েছি। ইতিমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যদি কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে তাদের কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না, এটা আমরা বলে দিয়েছি।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক তিনটার দিকে হলের চার শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পরিবারের জিম্মায় ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং অপরজনের পরিবারের লোকজনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।