কেন পড়ব রসায়ন ?

মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:৫৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৬২১ বার।

বিজ্ঞান ছাড়া জীবন অচল আর রসায়ন ছাড়া বিজ্ঞান। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা করি বা দেখি সবই রসায়নের ফসল। মানবদেহের চলাচল এবং ব্যাবহারিক পণ্যর গঠন ও কাজ জানতে হলে রসায়ন শেখা জরুরী। রসায়ন জানলে ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জ্ঞান থাকে যা উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করে। তাই রসায়ন জানা লোকের কর্মসংস্থানের অভাব হয় না। রসায়ন বিভাগ পরিচিতি নিয়ে এমনটি বলছিলেন সরকারী আজিজুল হক কলেজ রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক আহম্মেদ।

আগুন আবিষ্কারের পর থেকেই রসায়নের সুত্রপাত হয়। ভারত বর্ষে ৫০০০ বছর পুর্বেই কাপড়ে রঙের ব্যাবহার শুরু হয়ে ছিল। তবে মিশরীয় সভ্যতা রসায়নের পুর্নতা দেয়। রসায়ন চর্চা করায় তারা আলকেমি নামে পরিচিত ছিল। জাবির ইবনে হাইওয়ান ও ল্যাভয়সিয়েকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়। রসায়ন শব্দের ইংরেজী কেমিস্ট্রি। মধ্যযুগে পরশ পাথরের সন্ধানে পরীক্ষারত মুসলিম বিজ্ঞানীরা একটি শাস্ত্র বা পদ্ধতি আবিষ্কার করে। এটাকে তারা বলতো আলকামিস্তা। তা থেকে লাতিন কামিস্তা পরে ইংরেজীতে কেমিস্ট্রি নাম ধারণ করে। তবে রসায়নের উতকর্শ্তা লাভ করে ১৭শ শতাব্দীতে।


কি পড়ানো হয়ঃ

যার ভর আছে, স্থান দখল করে এবং স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার বাধা প্রদান করে তাকে পদার্থ বলে। পদার্থের মধ্যে অণু  থাকে যা আবার পরমাণু নিয়ে গঠিত। পরমাণু সমূহ গঠিত হয় ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এর সমন্বয়ে। এসব ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পদার্থের অনুর সাথে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকে এবং বিক্রিয়ার সময় এরা কি ধরনের আচরণ করে সেসব নিয়ে আলোচনা করা হয়। পদার্থের প্রকারভেদ ও গবেষণার সাদৃশ্য বিবেচনায় রসায়নের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলো হোল অজৈব রসায়ন অর্থাৎ রসায়নের যে শাখায় অজৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, জৈব রসায়ন বা যে শাখায় জৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, প্রাণরসায়ন রসায়নের যে শাখায় জীবদেহের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, ভৌত রসায়ন এই শাখায় আণবিক পর্যায়ে শক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত রাসায়নিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশ্লেষণী রসায়ন এক্ষেত্রে পদার্থের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের গঠন, সংযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাম্প্রতি রসায়নের আরও অনেক নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে, যেমন- স্নায়ুরসায়ন ও সবুজ রসায়ন। এসব শাখা প্রাণ রসায়ন, রসায়ন ও ফলিত রসায়ন বিভাগে পড়ানো হয়।

ভবিষ্যৎ কি?

রসায়নে পড়া শিক্ষার্থীদের বিচার বিশ্লেষণী দক্ষতা থাকায় কর্মক্ষেত্রে ভাল করে। শুধু কেমিস্ট নয়, দক্ষ প্রশাসক, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসেবে সমাজে অবদান রাখছে। রসায়নের শিক্ষার্থীদের জটিল সমস্যা সমাধান করতে হয় যা কর্মক্ষেত্রে অভিনবত্ব আনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করে। বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিষয়টি এক হওয়ায় রয়েছে উচ্চতর পড়াশোনা ও চাকরীর সুযোগ। বাংলাদেশে অনেক ছত্র-ছাত্রী আছে যারা ম্যাসাচুসেটস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজি, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ ও হাভার্ড  বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উন্নত দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহন ও গবেষণা করছে এবং মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা, মাইক্রোসফটের মত বড় প্রতিষ্ঠানে কজ করছে। তাই রসায়ন শিক্ষার রয়েছে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার।           

রসায়নের কর্মসংস্থান সমূহঃ  তুলনামুলক শিক্ষার্থী কম থাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশী থাকে।


১,কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স অফিসার হিসাবে বহুজাতিক আর দেশীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ। ঔষধ, গার্মেন্টস, ভোজ্য তেল, পেইন্টস, সিমেন্ট, কোমল পানীয় ইত্যাদির আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে।

২,স্পেক্ট্রস্কপি আর প্রোডাক্ট ফরমুলেশন এ দুটো বিষয়ে যদি পারদর্শী হলে যেকোন উৎপাদনমূখী ফার্মে সহজেই চাকরি সুযোগ রয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠান BSTI, BCSIR, WASA তেও কেমিস্ট হিসাবে চাকরি করার সুযোগ আছে। স্কুল, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। থার্ড পার্টি ল্যাব বা ইন্সপেকশন ল্যাব এ কাজের সুযোগ রয়েছে।

৩. এনার্জি এবং এনভায়রনমেন্ট, অ্যানালিটিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস সেক্টর, মেটাল এবং অ্যালয় সেক্টর এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন শাখা। যেমন- মেডিসিন সায়েন্স, আর্থ সায়েন্স।

৪. এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর মতো বিষয়ে ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে রসায়নে পড়া শিক্ষার্থীদের কাছে।

৫. এছাড়াও . রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট  রসায়নে গবেষণার বিপুল সুযোগ রয়েছে ।

কারা পড়বেঃ

রসায়ন তারই পড়া উচিৎ, যার বিষয় সম্পর্কে গভীরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।