৩০ বছর পর বগুড়া-১ আসনে এবার নৌকার  নতুন মুখঃ বিএনপিতে কাজী রফিক এগিয়ে

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৩২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৬২ বার।

প্রায় তিন দশক পর বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এবার নতুন মুখ খুঁজে নিতে হবে। ওই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আসা দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নানের আকস্মিক মৃত্যুতে সেখানে এখন নতুন মুখের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
তবে ওই আসনটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও শূণ্য ঘোষণা করা না হলেও আগামী উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। তাদের কেউ কেউ আবার নির্বাচনী এলাকা সফর এমনকি স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নিজেদেরকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরারও চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বসে নেই মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির নেতারাও। অবশ্য তাদের কেউ এখন পর্যন্ত এলাকায় না গেলেও সমর্থকদের মাধ্যমে ফেসবুকে কৌশলে আগাম প্রচার শুরু করেছেন। দিন যতই যাচ্ছে বিএনপি নেতাদের এমন কৌশলী প্রচার ততই বাড়ছে। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কৌশলগত কারণে পুরো পরিস্থিতি দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। বগুড়া-১ আসনটি শূণ্য ঘোষণার পর পরই দলীয় হাইকমাণ্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তারা মাঠে নেমে পড়বেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, গেল শতাব্দীর সত্তর দশকের শেষভাগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি এবং আশির দশকের শুরুতে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী আব্দুল মান্নান পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। যে কারণে ১৯৯১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সবগুলো জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-১ আসনের জন্য দলের হাইকমাÐ তাকেই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ফলে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওই আসনে আওয়ামী লীগের আরও একাধিক স্থানীয় নেতা মনোনয়ন চেয়েও বঞ্চিত হন। 
তবে গত ১৮ জানুয়ারি সাংসদ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ আসনে এবার নতুন মুখ খুঁজে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়াও ইতিপূর্বে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তারা কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু উপ-নির্বাচনে যদি দলের মনোনয়ন মরহুম আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সায়িাকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান কিংবা তাঁর ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজলকে দেওয়া হয় তাহলে অন্যদের আবারও অপেক্ষা ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকবে না। বগুড়া-১ আসনভুক্ত সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মরহুম আব্দুল মান্নানের ভায়রা আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক ডাকসু সদস্য আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর শাহী সুমন মনোনয়ন চাইতে পারেন। এদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নানা কৌশলে ভোটারদের মাঝে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি মন্ত্রীসভায় বগুড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন লাভের বিষয়টিকে প্রচারের উপলক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। বগুড়া থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে আব্দুর রাজ্জাক গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছেন।
গত ২০ জানুয়ারি মরহুম সাংসদ আব্দুল মান্নানের জানাজা ও দাফনের পরদিন তাঁর নিজ এলাকা সারিয়াকান্দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীরা আগামী উপ-নির্বাচনে প্রয়াত সাংসদ আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান কিংবা তাঁর ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজলকে উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, আব্দুল মান্নান সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় যে উন্নয়ন করেছেন তাতে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীই নন সাধারণ মানুষও তাঁর পরিবারের কাউকে এমপি হিসেবে দেখতে চান।
তবে প্রায় এক যুগ আগে আগে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া বগুড়া-১ আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপিও যে চেষ্টার কমতি করবে না সেটি খুব সহজেই অনুমেয়। ১৯৯১ থেকে পরবর্তী তিনটি তিনটি নির্বাচনে বিএনপির দখলে থাকা আসনটিতে মনোনয়নের সবচেয়ে বড় দাবিদার দলটির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রফিকুল ইসলাম। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়া কাজী রফিকুল ইসলাম ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হলেও সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বার প্রতিদ্ব›দ্বীতায় অবতীর্ণ হন। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ২০০৮ সালে দলের মনোনয়ন পাওয়া ব্যবসায়ী নেতা শোকরানা সম্প্রতি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে কাজী রফিকুল ইসলামই সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন। 
বর্তমান সাংসদ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর পর তিনি বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে তাঁর জানাজায় অংশ নেন। সে সময় বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীও তাঁর সঙ্গে জানাজায় অংশ নেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই আসনে জেলা বিএনপি নেতা ও সোনাতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল তৈয়ব জাকির, সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু মÐল ও জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন। জানতে চাইলে সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ২০০১ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয়েছে। আশাকরি এবারও দল তার ওপর আস্থা রাখবে এবং উপ-নির্বাচনে প্রার্থীতার সুযোগ পেলে এক যুগ পর আসনটি তিনি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবেন। জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য দল যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।