ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৫৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮১ বার।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের ইউনিয়ন স্থগিতে ঘুষ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই এমন অভিযোগ করেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের জেনারেল ম্যানেজার ও আইন উপদেষ্টা। তারা বলছেন, ঘুষ নয়, আইনজীবীকে এক বছরের ফি দেয়া হয়েছে। খবর জাগোনিউজটুয়েন্টিফোরডটকম

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের বক্তব্য, ‘ইউনিয়ন স্থগিতের জন্য ইতোমধ্যে শ্রম অধিদফতর ও তৃতীয় শ্রম আদালতের বিবিধ খরচ দেখিয়ে ৩০ লাখ ২০ হাজার (১০ লাখ ও ২০ লাখ ২০ হাজার টাকার দুটি ভাউচার) টাকা দিয়েছে গ্রামীণ টেলিকম। এ টাকা আইন উপদেষ্টা ফজলুর রশিদের মাধ্যমে খরচ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঘুষ দিয়ে ইউনিয়ন স্থগিতের বিষয়টি প্রকাশ পেলে হতাশায় নিমজ্জিত হন গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীরা। তাদের বক্তব্য, ‘আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু ইউনিয়নের কারণে আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ইউনিয়ন ধ্বংসের জন্য অসদুপায় অবলম্বন করা হচ্ছে। ড. ইউনূসের মতো গুণীজনের প্রতিষ্ঠানে যদি এ ধরনের চর্চা হয় তাহলে এ দেশে ট্রেড ইউনিয়ন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

কর্মীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি ও আইন উপদেষ্টা। তারা বলছেন, আইনজীবীর এক বছরের ফি হিসেবে ওই টাকা দেয়া হয়েছে। একসঙ্গে এত টাকা দেয়ায় তাদের চোখে লেগেছে।

শ্রম অধিদফতরের রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন হতে ২০১৮ সালের ২৮ মে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন রেজি. বি- ২১৯৪ নামে নিবন্ধন লাভ করে। রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর হতে বিভিন্ন জাতীয় ও সামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত এবং শ্রম আইন মেনে প্রতিষ্ঠানের দাবিনামা পেশ করছিল ইউনিয়নটি। এরপর শ্রম অধিদফতর থেকে দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয় গ্রামীণ টেলিকমকে। সালিশ বৈঠকে গ্রামীণ টেলিকমের কেউ উপস্থিত হননি।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও গ্রামীণ টেলিকমের কেউ উপস্থিত হননি। শ্রম অধিদফতর ইউনিয়নকে ব্যর্থতার সনদ প্রদান করেন। গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সালিশ প্রক্রিয়াটি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে একটি মামলা (বিএলএ, আইআর-১৬৬৬/২০১৯) দায়ের করে। মামলাটি এখন বিচারাধীন।

এরপর গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ তাদের আইন উপদেষ্টা ফজলুর রশিদের মাধ্যমে ইউনিয়ন স্থগিতের আবেদনসহ ইউনিয়ন বাতিলের জন্য একটি (বিএলএ, আইআর- ০১/২০২০) মামলা করেন।

গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এপোলো এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি আজ থেকে এক বছর পাঁচ মাস আগে শ্রম আইন মেনে শ্রম অধিদফতর হতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়। বিষয়টি গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানানোসহ তার সঙ্গে আমরা মিটিংও করি। প্রায় দেড় বছর পর এখন ইউনিয়ন বাতিলের জন্য শ্রম আদালতে মামলা করা হয়েছে। এটি তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত।

তিনি আরও বলেন, অ্যাডভোকেট ফজলুর রশিদকে ব্যবহার করে অসদুপায়ে শ্রম অধিদফতর ও আদালতকে প্রভাবিত করে গেল বছর ৩১ ডিসেম্বর মামলা করা হয়। একদিনের মধ্যে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ইউনিয়নের ওপর স্টে অর্ডার (স্থগিতাদেশ) নেন যা অত্যন্ত সন্দেহের। এ রায়ের জন্য ফজলুর রশিদ ৩০ লাখ টাকা খরচ করেন। তাই আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), শ্রম মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা পায়।

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান বলেন, “গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, সিবিএ (রেজি. বি- ২১৯৪) একটি আদর্শ ইউনিয়ন হিসেবে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা ‘ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়ন’-এর সদস্যপদ লাভ করে এবং গত ১ জানুয়ারি ‘ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়ন’- এর সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন কেক কেটে এর যাত্রা শুরু করে। গ্রামীণ পরিবারে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন একমাত্র ইউনিয়ন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার আমাদের চেয়ারম্যান, তাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। তারই প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন ধ্বংসের যদি অসদুপায় অবলম্বন করা হয় তাহলে এ দেশে ট্রেড ইউনিয়নের চর্চা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য মো. কহিনুর রহমান বলেন, আমরা আইন মেনেই ইউনিয়নের নিবন্ধন পেয়েছি। কিন্তু গ্রামীণ পরিবার শ্রম আইন না মানায় আজ এ সংকট তৈরি হয়েছে। তাই আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের চেষ্টা করছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মোটেও সত্য নয়। আমরা আইন উপদেষ্টা ফজলুর রশিদকে এক বছরের ফি বাবদ ৩০ লাখ টাকা দিয়েছি। একসঙ্গে এত টাকা দেয়ায় তাদের চোখে লেগেছে। তিনি তো আমাদের টেলিকমের একাধিক মামলা পরিচালনা করেন।

এ বিষয় আইনজীবী ফজলুর রশিদ বলেন, আইনজীবীর ফি হিসাবে এ টাকা নেয়া হয়েছে। একজন আইনজীবী ফি হিসাবে কত টাকা নেবেন- সেটা তো নির্ধারিত নেই। এক বছরের ফি একসঙ্গে নেয়ায় টাকার অংকটা বেশি মনে হচ্ছে। গ্রামীণের কর্মীরা যে অভিযোগ তুলেছেন তা সঠিক নয়।