গৃহস্থালির ‘সেন্ট্রাল সিলিন্ডারে’ দুর্ঘটনার শঙ্কা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:২৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯৫ বার।

আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ। বিকল্প হিসেবে অনেক গ্রাহক এলপি গ্যাস ব্যবহার করছেন। তবে ইদানিং ফ্লাটগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে এলপিজি’র ব্যবহার শুরু হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে একসঙ্গে বাসার নিচে বা পাশে বড় সিলিন্ডার থেকে এলপি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সিলিন্ডার থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাসায় বাসায় সরবরাহ করা হচ্ছে গ্যাস। ব্যবহার সুবিধাজনক হলেও এভাবে এলপিজি ব্যবহারের নিরাপদ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খবর বাংলা ট্রিবিউন

বিস্ফোরক পরিদফতর বলছে, এটি এলপিজির অনিরাপদ ব্যবহার। সামান্য ভুলে ঘটতে পারে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। সঙ্গত কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে এলপি গ্যাস বিতরণে গ্রাহকদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিস্ফোরক পরিদফতর সূত্র বলছে, বাতাসের সঙ্গে মাত্র দুই ভাগ এলপিজির সংমিশ্রণই বিস্ফোরক হিসেবে বিবেচিত হয়। কোনও কারণে বাতাসের সঙ্গে এই পরিমাণ এলপিজির সংমিশ্রণ ঘটার পর তা আগুনের সংস্পর্শে এলেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এলপিজি যেহেতু বাতাসের চেয়ে ভারি, তাই এই গ্যাস কখনও বাতাসে উড়ে যায় না। কোনও কারণে লিকেজ হলে এই বোতলের আশেপাশেই জমা হয়।

জানা যায়, মিরপুর ১৩ নম্বরের রূপসী প্রোঅ্যাকটিভ ভিলেজ এলাকাটি নতুন গড়ে ওঠার কারণে সেখানে পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ নেই। তাই সবাই এলপি গ্যাস ব্যবহার করছেন। এই হাউজিংয়ে মোট সাতটি বিল্ডিং রয়েছে। বাসিন্দারা আলাদা আলাদা এলপি গ্যাসের সিলিণ্ডার ব্যবহার না করে একসঙ্গে একটা বড় সিলিন্ডারে (যাকে মার্কেটিং এর ভাষায় বলা হয় বুলেট সিলিণ্ডার) করে গ্যাস ব্যবহার করছে। সিলিণ্ডার থেকে পাইপ দিয়ে প্রতিটি তলায় পৌঁছে যাচ্ছে গ্যাস।

শুধু এই একটি এলাকা নয়, রাজধানীতে যেসব নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগ জায়গাতে এই পদ্ধতিতে গ্যাস বিতরণ করা হচ্ছে।

রূপসী প্রোঅ্যাকটিভ ভিলেজ এর বাসিন্দা রহিম শেখ জানান, পাইপলাইনের গ্যাস না পেলে পাইপলাইনে এলপি গ্যাস ব্যবহার খুবই আরামদায়ক। বার বার সিলিণ্ডার বদলের ঝামেলা নেই। আমাদের এখানে গ্যাস সরবরাহ করছে এনার্জি প্যাক। তারা প্রতি সপ্তাহে লোক পাঠিয়ে সার্ভিসিং করে দিয়ে যায়, গ্যাস শেষ হলে নতুন সিলিন্ডার এনে দেয়।

নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে রহিম শেখ বলেন, ‘আমরা দুই বিল্ডিং এর মধ্যের ফাকা জায়গাটাতে সিলিণ্ডারটি রেখেছি। নিরপত্তার কথা চিন্তা করে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে জায়গাটি, যাতে করে বাচ্চারা ধরতে না পারে। আবার লিকেজ হলেও গ্যাস জমে দুর্ঘটনা না ঘটে। তবে শুনেছি, এলপি গ্যাস বাতাসের চেয়ে ভারি। তাই সেটি কোথাও গিয়ে জমলে বা এই কারণে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা আমার বুঝতে পারবো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম বলেন, ‘এটা মূলত একটি বুলেট আকারে সিলিণ্ডারে করে বিল্ডিংয়ের বাইরে মাটিতে রাখা হয়। বেজমেন্টে রাখার কথা না। উন্মুক্ত স্থানে রাখতে হবে, যাতে করে গ্যাসের লিকেজ হলে কোনও সমস্যা না হয়। সাধারণত নতুন বিল্ডিং এর মধ্যে ১০-১৫ ফুট জায়গা রাখা হয়, সেই জায়গায় এই বুলেট সিলিণ্ডার বসানো যায়। এটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু যদি লিকেজ হয় সেটা ভিন্ন কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের এলপিজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের কোনও নীতিমালাই হয়নি। আলোচনা চলছে কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। নিরাপত্তা এবং ব্যবহারের বিষয়ে সঠিক নিরাপত্তার জন্য সঠিক নীতিমালা খুবই প্রয়োজন। নীতিমালা না হলে নানা কারণেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

কিন্তু ভিন্নমত প্রকাশ করেন বিস্ফোরক পরিদফতরের পরিদর্শক আব্দুল হান্নান। তিনি জানান, এটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। কারণ দুই ভাগ এলপিজি যদি বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকে তখন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এজন্য গ্রাহককে সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই ভবনের নিচে বেজমেন্টে রাখা যাবে না। কিন্তু রাজধানীতে অধিকাংশ বাড়িতে রাখার জন্য আলাদা কোনও জায়গা নেই। ফলে বেজমেন্টই ব্যবহার করা হয়।’ দুর্ঘটনা ঘটলে ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।