বাংলাদেশে তিন বছর পর পর আসে নতুন রোগ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:২০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৩৭ বার।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১৮টি নতুন রোগ শনাক্ত হয়েছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই রোগগুলো অন্য দেশের লোক বা প্রাণীদের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি তিন বছরে দেশে একটি নতুন রোগ প্রবেশ করে। 

চীনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও নতুন করে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। এর আগেও, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, মার্স করোনা ভাইরাস, সার্স করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় দেশে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল।

ঢাকায় গত ২৮-৩০ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ১৫তম ডায়েরিয়াজনিত রোগ ও অপুষ্টিবিষয়ক এশীয় সম্মেলনের একটি অধিবেশনে সংক্রামক রোগের একটি তালিকা উপস্থাপন করা হয়। ১৯৭০ সালের পর থেকে বিশ্বে শনাক্ত হওয়া নতুন এসব সংক্রামক রোগের তালিকা তৈরি করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারিবিষয়ক পর্যালোচনা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া নতুন রোগের পৃথক একটি তালিকাও তৈরি করেন। 

মাহমুদুর রহমানের তালিকা অনুসারে স্বাধীনতার পর দেশে ১৮টি নতুন রোগ শনাক্ত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে এ দেশের মানুষ প্রথম ‘জাপানিজ এনকেফালাইটস’ নামের রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগের বাহক মশা। তালিকায় সব শেষে আছে ‘ক্যানডিডা আউরুস’ নামের ছত্রাক। এই ছত্রাক ওষুধ প্রতিরোধী। সাধারণত বিভিন্ন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রোগীরা এতে আক্রান্ত হচ্ছে। 

এইচআইভি/এইডস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, নিপাহ, জিকা— এসব রোগ অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এদের নাম বেশি শোনা যায়। কিন্তু আরও কিছু রোগের নাম তালিকায় আছে যেগুলো নিয়ে আলোচনা বা জানাজানি কম হয়েছে। যেমন ২০১৩ সালে শনাক্ত হওয়া নোরো ভাইরাস বা ২০০০ সালে লেপটোসিরোসিস নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। প্রথমটি পাখির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়টি ইঁদুরের প্রস্রাবের মাধ্যমে ছড়ায়।

রোগের আবির্ভাবে দেখা যাচ্ছে- যা ছিল প্রাণীর রোগ, তাতে এখন আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যেমন সোয়াইন ফ্লু। মূলত শূকরের রোগ। কিন্তু এখন মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন হয়ে নতুন ভাইরাস হয়। কিছু ভাইরাস অন্য প্রাণীর মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে এলে তা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। যেমন নিপাহ ভাইরাস। এই ভাইরাস বাদুড় বহন করে। কিন্তু বাদুড় থেকে মানুষে এলেই সমস্যা তৈরি হয়। এ রকম কত রোগ প্রাণী থেকে মানুষে আসছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। 

১০ বছর আগে ঢাকার একটি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি-আটলান্টা) সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথের সহকারী পরিচালক পিটার বি ব্লোল্যান্ড তার উপস্থাপনায় বলেছিলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ জীবাণু দ্বারা মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস আছে। এসব জীবাণুর ৬১ শতাংশের উৎস প্রাণিজগৎ। ১৯৮০ সাল থেকে (২০১০ সাল পর্যন্ত) মানুষ ৮৭টি নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

১৯৭০ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানের করা তালিকায় বৈশ্বিকভাবে আলোচিত ৩২টি নতুন রোগের উল্লেখ আছে।

মাহমুদুর রহমানের তৈরি করা বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের তালিকা পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়, আমেরিকা, আফ্রিকা বা ইউরোপের কোনো দেশে দেখা দেওয়া নতুন রোগ কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে চলে আসে। কখনো সময় নেয় বেশি, কখনো কম। যেমন- এইচআইভি/এইডস আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮০ সালে। বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। নিপাহ প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, মালয়েশিয়ায়। এর তিন বছরের মাথায় ২০০১ সালে তা বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিল।

চীনের উহান শহরে নতুন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে সংক্রামক রোগের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। মার্স, সার্চসহ বেশ কয়েক ধরনের করোনা ভাইরাস আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনা ভাইরাসটির নাম দিয়েছে নভেল ‘২০১৯-এনসিওভি’। সরকারি হিসাব অনুযায়ী শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ভয়াবহ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৭১৭ জনে পৌঁছেছে। চীনের সীমানা পেরিয়ে ভাইরাসটি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আরও অন্তত ২৮টি দেশে। এখন পর্যন্ত রোগটির কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।