সংরক্ষিত বনে অবকাঠামো: ক্ষতিপূরণ চাইবে মন্ত্রণালয়

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:০৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯৩ বার।

সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে সরকারের অন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো অবকাঠামো (রাস্তাঘাট- রেললাইন-বৈদ্যুতিক লাইন) নির্মাণ করায় ক্ষতিপূরণ আদায় করবে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। বনবিভাগ ইতোপূর্বে নির্মিত এবং নির্মাণ চলমান এসব অবকাঠামোয় বনের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে। খবর বাংলা ট্রিবিউন

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে কী পরিমাণ সরকারি অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় কী পরিমাণ রাস্তা-ঘাট ও বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করেছে তার আংশিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে, সংরক্ষিত বনে কী পরিমাণ রেললাইন রয়েছে সেই তথ্য ওই বৈঠকে আসেনি।

জানা গেছে, ওই বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা শেষে এসব অবকাঠামো নির্মাণে গাছ-গাছালিসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে মন্ত্রণালয়কে তা নিরূপণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত হয় সরকারের কোন কোন সংস্থা কী পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা যাচাই করে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের। এছাড়া সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের প্রকল্প আর গ্রহণ করা না হয় সে সুপারিশও আসে বৈঠক থেকে। এমন কী বিদ্যমান প্রকল্পগুলো বাইপাস করে বনের পাশ দিয়ে নেওয়া যায় কিনা সে বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

জানা গেছে, বৈঠকে বন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রটোকল তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় যাতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নতুন কোনও প্রকল্প তৈরির সময় সংরক্ষিত বনের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনারও পরামর্শ আসে ওই সভা থেকে।

জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে চট্টগ্রামের হাজারীখিল সংরক্ষিত বনের অভ্যন্তরে ৯ কিলোমিটার সড়ক, লিঙ্করোড হতে টেকনাফ সড়কের দুপাশে সড়ক ও জনপদ রাস্তা সম্প্রসারণ, কক্সবাজারের সুরাজপুর মৌজার ইয়াংছা হতে জিদ্দাবাজার পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকাকরণ, মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যদিয়ে আলী কদম-পোয়ামুহুরী পর্যন্ত ৩৭.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্থের দুই লেন রাস্তা নির্মাণ, সাঙ্গু সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে থানচি-রেমারকি-মদন-লিকরী ৪০-৪৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, গাজীপুর সদর, জয়দেবপুর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ৫৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ, দেশের ৮টি জেলার ২৪টি উপজেলার বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে ৪৫৭ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ, চট্টগ্রামে মেঘনা-মদুনাঘাট পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ চলমান থাকা এবং গাজীপুর সদর, জয়দেবপুর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ১৭২ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে রেললাইন নির্মাণের বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংরক্ষিত বা রক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণে ক্ষয়-ক্ষতি আদায়ের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন অধিদফতর কাজ করে ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করবে।

তিনি জানান, অনেক সময় প্রকল্প গ্রহণের সময় প্রকল্প এলাকা সংরক্ষিত বনের ওপর দিয়ে গেলেও তা একনেক বৈঠকের নজরে আসে না। এজন্য প্রকল্প প্রস্তাবনায় একটি অনুচ্ছেদ জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ওই প্রকল্প রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ হলেও যেন জানা থাকে যে এটা সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে যাচ্ছে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে কী পরিমাণ রাস্তা-ঘাট, রেললাইন ও বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ হয়েছে আমরা তার প্রাথমিক তথ্য নিয়েছি। তবে, এটি পূর্ণাঙ্গ নয়।

আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ভেতর রাস্তা-ঘাট, রেললাইন ও বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের কোনও সুযোগ নেই উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, সংরক্ষিত বনের ভেতরে যে পরিমাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তাতে বন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করতে বলা হয়েছে। এটা নিরূপণ করে সংশ্লিষ্টদের কাছে তার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে।

তিনি জানান,এমন ঘটনাও ঘটেছে কিছু প্রকল্প শুরু আগে কোনও ধরনের যোগাযোগও করা করেনি। তারা নিজেরাই কাজ শুরু করে। এসব প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের সময় জানানোও হয় না তা সংরক্ষিত বনের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক অনেক সময় জাতীয় স্বার্থে প্রকল্প নেওয়া হয়। আবার এটাও সত্য যে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থের অংশ। এজন্য আমরা চাই কোনও প্রকল্প গ্রহণের সময় সেটা যদি সংরক্ষিত বনের ওপর দিয়ে যায় তা যেন উল্লেখ থাকে। এতে করে প্রকল্প পাসের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন কোন স্বার্থটাকে অগ্রাধিকার দেবেন।