শেরপুরে ঐতিহাসিক মা ভবানীর মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমা উৎসবে পূণ্যার্থীদের ঢল

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:৫৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১৯ বার।

উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫১টি পীঠস্থানের অন্যতম ঐতিহাসিক বগুড়ার শেরপুরের মা ভবানীর মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমা উৎসব উদযাপিত হয়েছে। অতীত জীবনের পাপ মোচনসহ পূন্যলাভের আশায় রোববার ওই মন্দিরস্থলে বসেছিল দেশ-বিদেশ থেকে আগত পূণ্যার্থীদের মিলনমেলা। দিনটিকে ঘিরে সকাল থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী হাজার হাজার নারী-পুরুষ পূণ্য লাভের আশায় মন্দিরস্থলে সমবেত হন এবং শাঁখা পুকুরে পূন্যস্নান করতে থাকেন। প্রতি বছর মাঘ মাসে পূর্ণিমার চাঁদের মাঘী পূর্ণিমার পঞ্জিকা তিথি অনুযায়ী এই পূন্যস্থানে মাঘী পূর্ণিমা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

এই মাতৃমন্দির মহাশক্তির ৫১টি পীঠস্থানের অন্যতম। কালিকাপুরান অনুসারে দক্ষযজ্ঞে দেবী সতীর স্বামীনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। সতীর প্রাণহীন দেহ স্কন্ধে নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেব প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। সেই মহাপ্রলয় নৃত্য থেকে বিশ্ব ব্রক্ষান্ড রক্ষা কল্পে স্বয়ম্ভু বিষ্ণু সুদর্শণ চক্র দ্বারা সতীর প্রানহীণ দেহ ৫১টি খন্ডে বিভক্ত করেন। সেই সব দেহখন্ড বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পতিত হলে একান্নাটি পীঠস্থানের উদ্ভব হয়। ভবানীপুরে দেবীর বামতল্প বা বামপাজরাস্থি মতান্তরে দক্ষিন চক্ষু পতিত হয়েছিল। এই পীঠস্থানে দেবীর নাম অর্পনা (ভবানী) এবং বামন ভৈরব।
 

ধর্মীয় শাস্ত্রমতে, মাঘী পূর্ণিমার দিনে এ স্থানে অংশ নিলে তার অতীত জীবনের পাপ মোচনসহ পূন্যলাভ হয়। আর সেই আশায় দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত নর নারী ও শিশু কিশোর মন্দিরের শাঁখা পুকুরে স্নান করেন। সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক এই মন্দিরে রক্ষিত প্রতিমা দর্শন, পূজাঅর্চনা, ভোগদান, অর্ঘদান, মাতৃদর্শন করেন ভক্তরা। মন্দিরের পক্ষ থেকে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

 
গত শনিবার রাত থেকেই তিথি অনুযায়ি মা ভবানীর মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমার উৎসবে যোগ দিতে পূণ্যার্থীরা আসতে থাকেন। এজন্য অসংখ্য দর্শনার্থী মন্দির এলাকা ও আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে রাত্রি যাপন করেন। মাঘী পূর্ণিমা উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য নিমাই ঘোষ জানান, যুগ যুগ আগে থেকেই এই ধর্মীয় তিথি উৎসব পালন হয়ে আসছে। এ বছরও প্রায় হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটেছে। এখানে দূর-দূরান্তের পূণ্যার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে এ উপলক্ষে প্রতিবছর মা ভবানী মন্দিরের চারপাশে মেলা বসে। মেলায় মিষ্টান্ন সামগ্রীসহ পাওয়া যায় রকমারি খাবার। সেই সাথে শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, ইতিহাস ঐতিহ্যখ্যাত বই পুস্তকও মেলায় পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিবারের ন্যায় এবারো শান্তিপুর্নভাবে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন করার সুবিধার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলগঠন করা হয়েছে।