নূর-রাব্বানীকে ছাড়াই সাড়ে ৮৩ লাখ টাকা খরচ করেছেন ডাকসু নেতারা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:৫৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪১ বার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বার্ষিক বাজেট ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। শনিবার ডাকসুর কার্যনির্বাহী সভায় গত ৯ মাসের ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বাজেটের ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার মধ্যে ৯ মাসে ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০৪ টাকা উত্তোলন করেছেন ডাকসুর বিভিন্ন পদে থাকা নেতারা। অন্যদিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্পনসর থেকে ডাকসু ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৪ টাকা পেয়েছে। এ ছাড়া ডাকসু কার্যালয় ব্যবস্থাপনা খাতে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খবর সমকাল অনলাইন 

তবে ব্যয়ের খাতে ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানীর নামে কোনো হিসাব নেই। ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্য জিএসের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ তুলে ব্যয় করেছেন।

প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৪ টাকা, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিন ৬ লাখ ৭১ হাজার ৯০০ টাকা, স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ৭ লাখ ৮২ হাজার ১২০ টাকা, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস-ঈ-নোমান ৫৮ হাজার ৭০০ টাকা উত্তোলন করেছেন। ভিপি নুরের সঙ্গে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন।

হিসাব মতে, ডাকসুর সদস্যদের মধ্যে তহবিল থেকে সাইফুল ইসলাম ১ লাখ টাকা, তানভীর হাসান ৯০ হাজার টাকা, রাকিবুল হাসান ৬১ হাজার ৭০০ টাকা, রাইসা নাসের ৭৪ হাজার ৫০ টাকা, রকিবুল ইসলাম ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, মুহা. মাহমুদুল হাসান ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা, রফিকুল ইসলাম ৩০ হাজার টাকা, ফরিদা পারভীন ৬১ হাজার ৫০০ টাকা এবং যোশীয় সাংমা তহবিল থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। সদস্যদের জন্য আলাদা কোনো বাজেট ছিল না। এই টাকা তারা তুলেছেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীর তহবিল থেকে।

ডাকসু নেতাদের দায়িত্ব নেয়ার পর ৩০ মে বাজেট পাস হয়। তাতে ভিপির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৫ লাখ টাকা। জিএসের জন্য তিন খাতে মোট ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে অভিষেক অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ৩০ লাখ, সাধারণ অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ১৭ লাখ টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে ৫ লাখ টাকা।

সম্পাদকদের মধ্যে ৭ জনের নাম বরাদ্দ রাখা হলেও এজিএস ও ১৩ জন সদস্যের জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ ছিল না। জিএসের সহায়ক হিসেবে এজিএস ও ৯ জন সম্পাদকের সঙ্গে ১৩ জন সদস্যের কাজ করার কথা বলা হয়েছিল।

এই বরাদ্দ থেকে একটি টাকাও তুলতে পারেননি ভিপি নুর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ মাসে আমি একটি টাকাও তুলতে পারিনি। নুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাকে নামে মাত্র ডাকসুর এক্সিকিউটিভ কমিটিতে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যত খরচ হয়েছে, জিএস ও এজিএসের সিদ্ধান্তেই সব হয়েছে।

ভিপি নুরুল হক জানান, তিনটি চিঠিতে তিনি ৪০ হাজার টাকা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের র্যা গ ডে উদযাপনের জন্য ১০ হাজার, শামসুন নাহার হলের একজন অ্যাথলেটকে একটি রেসিং সাইকেল কেনার জন্য ১০ হাজার এবং একটি শিক্ষাসফরে বরাদ্দের জন্য আরও ২০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। এ জন্য তিনি জিএস ও এজিএসের অদৃশ্য প্রভাবকে দায়ী করেন।

এ বিষয়ে ডাকসুর কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, নুরুল হক টাকা চেয়ে পাননি—এমন ঘটনা তার জানা নেই। এক ছাত্রীকে (অ্যাথলেটও) রেসিং সাইকেল কিনে দিতে যে টাকা চেয়েছিলেন নুর, তা তার ‘ব্যক্তিগত বিষয়’। এ কারণে তা দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ডাকসুর টাকা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক কল্যাণে ব্যয় হবে, ব্যক্তিগতভাবে কারও জন্য এই টাকা খরচ করা যায় না।

ডাকসুর এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন ভিপি নুরের অদৃশ্য প্রভাবের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, নুরুর ওই অভিযোগ বালখিল্য আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়।

ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীও ডাকসুর ফান্ড থেকে কোনো টাকা তোলেননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ফান্ড থেকে আমি কোনো টাকা তুলিনি। ডাকসুর ১৩ জন সদস্যের তো কোনো বরাদ্দ নেই। তারা যেসব কাজ করেছে, সব আমার বরাদ্দ থেকে ব্যয় করেছে। আমি আমার ব্যক্তিগত কোনো কাজ বা প্রোগ্রামের জন্য টাকা তুলিনি।