রাবিতে অধ্যক্ষের মেয়েকে বিয়ে না করায় শিক্ষককে হয়রানি!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:৩৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৮ বার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক দুরুল হুদাকে নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শফিউল আলম।

কিন্তু প্রভাষক দুরুল হুদা তা নাকচ করে দেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অধ্যক্ষ এবং তার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু। তারা দুরুল হুদার নামে মামলা করে এখন হয়রানি করছেন তাকে।

দুরুল হুদা বুধবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন।

তিনি জানান, অধ্যক্ষের মেয়েকে বিয়ে না করে তিনি অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ তাকে ফাঁসিয়েছেন মিথ্যা মামলায়।

এ মামলায় তিনি কিছুদিন কারাভোগ করেছেন। এখন অধ্যক্ষ তার জামিন বাতিলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে তাকে চাকরিচ্যুত করারও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন প্রভাবশালী অধ্যক্ষ এবং তার স্ত্রী।

দুরুল হুদা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ৪-ই পেয়েছেন। মেধাক্রমে হয়েছেন প্রথম। পড়াশোনা শেষ করে ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক পদে যোগদান করেন।

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তার ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে দুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে অধ্যক্ষের বড় মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে দাবি দুরুলের।

সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে খুব সাধারণ পরিবারের ছেলে উল্লেখ করে দুরুল বলেন, চাকরিতে যোগ দেয়ার কিছুদিন পরই অধ্যক্ষ তার বড় মেয়ের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু অধ্যক্ষ ধনী ব্যক্তি বলে বিয়েতে রাজি হননি দুরুল।

এরপর তিনি অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ শফিউল আলম স্কুলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করতেন। চেষ্টা করতেন কোণঠাসা করে রাখার।

শুধু তাই নয়, নিজের ছোট মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করতেন। মেয়েটিও অধ্যক্ষের স্কুলের ছাত্রী। দুরুল হুদা স্কুল ছুটির পর প্রথমে অধ্যক্ষের চেম্বারে বসেই মেয়েটিকে প্রাইভেট পড়াতেন। পরে তাকে বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বলা হয়।

তিনি বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। তবে কখনও ফোন করা না হলে বাসায় যেতেন না। গত বছরের ১৪ অক্টোবর দুরুল হুদা আর প্রাইভেট পড়াবেন না বলে জানিয়ে দেন।

দুরুল হুদা বলেন, প্রাইভেট পড়াতে পারব না বলে জানিয়ে এলেও দুইদিন পর ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় অধ্যক্ষ আবার ফোন করে ডাকেন। আমি তার মেয়েকে প্রাইভেট পড়িয়ে বাসায় আসি। এর কিছুক্ষণ পর অধ্যক্ষ আবার ডাকেন।

আমি গেলে অধ্যক্ষ বলেন, আমি নাকি তার মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছি। এ জন্য আমাকে সাতদিনের মধ্যে স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। তিনি বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে চাকরি ছাড়িনি।

দুরুল বলেন, এ ঘটনার চারদিন পর অধ্যক্ষ তার মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে থানায় মামলা করেন। প্রভাব খাটিয়ে তারা আমাকে গ্রেফতারও করান। আদালত থেকে জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসলে আমাকে চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ দিতে শুরু করেন তারা। পরে গণমাধ্যমেও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে জামিন বাতিল করিয়ে আবার গ্রেফতার করানোর চেষ্টা করেন।

তাতেও তাদের অপচেষ্টা সফল না হওয়ায় তারা আমাকে চাকরিচ্যুতি এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এ নিয়ে তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ শফিউল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দুরুল হুদা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে জিডি করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, দুরুলের জিডিতে যা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাকে আমরা কেন চাকরিচ্যুত করতে যাব? সে অপরাধ করেছে, আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগে মামলা হলে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে তদন্ত করা হয়। সেটাও এখনও করা হয়নি। তার সব কথা মিথ্যা।