এ সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, গোটা জাতির সমস্যা: মির্জা ফখরুল

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:৪৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৭ বার।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পানি সমস্যার সমাধান হয় না, সীমান্তে হত্যা হয় তার কোনো বিচার হয় না, একটা কথা বলতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা উঠে দাঁড়াতে চাই। আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি অতীতে। আমি বিশ্বাস করি, বারবার এদেশের মানুষ জেলে গিয়েছে। আমি কখনও বিশ্বাস করি না, এই সমস্যা শুধু বিএনপির সমস্যা-এটা নয়। এটা গোটা জাতির সমস্যা। সমগ্র জাতি আজকে পরাধীন হয়ে যাচ্ছে। সমগ্র জাতি আজকে তাদের অর্জনগুলোকে হারাচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে। উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, সোচ্চার হতে হবে, রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। খবর যুগান্তর অনলাইন 

তিনি বলেন, আসুন এই ভাষা শহীদদেরকে স্মরণ করে আজকে সবাই শপথ নেই, আমরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করব এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, এখন এই সরকারের আমলে দেখছি, এখানে নারীদের কোন সম্মান নেই। এখানে মানুষের কোন সম্মান নেই, জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আজকে দেশের চতুর্দিকে ত্রাস ও ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন কোন জায়গা নিয়ে গেছে খবরের কাগজ খুললেই তা স্পষ্ট। আজকেও (গতকাল) খবরে এসেছে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরার জন্যে তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে এসছে, ৪০ বছর তার বয়স। তুলে নিয়ে এসে তাকে থানার মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এরকম ঘটনা আমরা আগে কখনো শুনতে পাইনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে অর্থনীতি প্রায় ধবংস হয়ে যাচ্ছে বলা যায়। দুর্নীতির এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যেখানে পত্রিকা খুললেই দেখবেন, ১১০ কোটি দিয়ে ব্যাসিক ব্যাংকের এক এমডি বাড়ি কিনেছেন। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার হয়, সাজা হয় ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলার জন্য। অথচ যিনি ১১০ কোটি টাকার বাড়ি বানিয়েছেন, শত শত কোটি টাকার যিনি লুটপাট করে নিয়েছেন তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক দেখতে পায়না। এখন পর্যন্ত তাকে একটা নোটিস পর্যন্ত করা হয়নি। এই হচ্ছে এদেশের অবস্থা। দেশের অর্থনীতি সুপরিকল্পিভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। যাতে করে বাংলাদেশ একটা পরনির্ভরশীল দেশ হয়ে থাকে।

সরকারের পররাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারে না। আমাদের পানি সমস্যার সমাধান হয় না। আমাদের সীমান্তে মানুষ হত্যা করা হয় তার কোনো বিচার হয় না। একটা কথা বলতে পর্যন্ত সাহস পায় না। এই অবস্থায় নিয়ে এসছে দেশকে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনকে আমরা এককথায় বলি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের আন্দোলন। কারণ অন্যায় ছিল পাকিস্তানের মেজরেটির জনসংখ্যার ভাষা ছিলো বাংলা, সেখানে উর্দু বলা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল আমাদের পূর্বপুরুষ, ওই সময়ের ছাত্র নেতারা। সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তিনি বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন যে, ‘কে ভোট দিলো, কে ভোট দিলো না- এটা আমাদের দেখার বিষয় না। আওয়ামী লীগ এগুলো কেয়ার করে না।’ কত বড় অন্যায় কথা। আমাদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র। ১৯৭৫ সালে সেই গণতন্ত্রকে তারা একবার হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো। আবার এখন অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি করে। তারা ভালো করে জানে, জনগন সুযোগ পেলে তাদেরকে ভোট দেবে না। তাই তারা(আওয়ামী লীগ) বলতে পারে কে ভোট দিলো, কে দিলো না তাতে কিছু আসে যায় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে প্রতিবাদের মনোভাব নিয়ে সকল ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য দরখাস্ত করেছি। জজ সাহেব বললেন, এটা তো আমরা আগেই দেখেছি আবার কেন আনলেন? আমরা বললাম যে, উনার (খালেদা জিয়া) যে গত দুই মাসে কত অবণতি হয়েছে সেটা আপনাদের দৃষ্টিতে আনা দরকার এবং এখন তার অবস্থা অনেক খারাপ। দুই মাস আগে আপনি রিফিউজ করেছেন, আপনি দেননি জামিন। আমরা এখন নতুন গ্রাউন্ড নিয়ে এসছি, আমরা শুনানি করতে চাই। আমরা বলেছি, আপনি আমাদের এটা শুনেন, এটাতে আপনি নতুন গ্রাউন্ড পাবেন। যদি স্বাস্থ্যগত কারণে, মানবিক কারণে তাকে(খালেদা জিয়া) জামিন দেন। আমি এখনও আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন মুক্তি দেবেন। আর যদি না দেন, আন্দোলন ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নাই আমাদের কাছে। তখন আমাদেরকে বাধ্য করা হবে একটা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহন করতে।

বর্তমান সরকারকে অমানবিক সরকার হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যগত অবস্থা এমন অবনতি ঘটেছে। এটা একটি অমানবিক সরকার। অনেক ফ্যাসিস্ট সরকার আছেন, অনেক কর্তৃত্ববাদ সরকার আছে যারা এতটা অমানবিক না। অন্ততঃ মানবতাবোধ অনেক সরকার দেখিয়েছে অতীতে আমরা দেখেছি। কিন্তু এই সরকার একেবারে মানবতাবিহীন একটি সরকার। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোন কিছুতে তারা বিশ্বাস করে না। প্রত্যেকটা জিনিস তারা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছেন।

এছাড়া ভাষা আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, যুবদলের গোলাম মাওলা শাহিন, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির শিরিন সুলতানা, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মাহবুবুল আলম নান্নু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অমলেন্দু দাস অপু, আমিরুজ্জামান শিমুল, রফিক শিকদার, খন্দকার মারুফ হোসেন প্রমুখ।