করোনাভাইরাস: ব্যাংকের সহযোগিতা চায় এফবিসিসিআই

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:৪০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৭ বার।

চীনের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশটির সঙ্গে এক মাস সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটছে। সময় মতো চীন থেকে পণ্য জাহাজীকরণ না হওয়ায় ঋণের বাড়তি সুদ ও দণ্ড সুদ দিতে হবে এবং ঋণ খেলাপি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এর প্রেক্ষিতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য ঋণ সহায়তা ও এলসি মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন স্ট্র্যাটেজি করারও প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। খবর যুগান্তর অনলাইন 

শনিবার মতিঝিলের নিজ কার্যালয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনাভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এফবিসিসিআই। সেখানে এ সব কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। যে সব এলসি আগে খোলা ছিল সেগুলোর জাহাজীকরণ ও ডকুমেন্টস পাওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। নতুন এলসি খোলাও কমে যাচ্ছে। বস্ত্র ও তৈরি পোশাকসহ সব ম্যানুফ্যাকচারিং খাত- চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, ফুটওয়্যার, কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস, মেডিকেল ইন্সটুমেন্টস, কম্পিউটার, ওয়াটার পাম্প, মোটর ছাড়াও পরিবহন ও যোগাযোগসহ সব খাতে স্বাভাবিক সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

আশংকা প্রকাশ করে শেখ ফাহিম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সাপ্লাই চেইনে প্রায় এক মাসের মতো বিঘ্ন ঘটেছে। আমাদের আশংকা ব্যাংকিং খাতে পেমেন্ট ওভারডিউ (যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারা) হওয়ার আশংকা আছে। এ অবস্থায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য ঋণ সহায়তা ও ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে সরবরাহ করলে তাদের অ্যাকাউন্ট যাতে ক্লাসিফাইড (খেলাপি) না হয় এবং এডিশনাল চার্জ, ইন্টারেস্ট পেনালাইজড (দণ্ড সুদ ) না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। যে সব ঋণপত্র খোলা আছে, শিপমেন্ট হচ্ছে না এবং শিপমেন্টে সময় লাগছে, তাদের ক্ষেত্রে অন্য কোনো সোর্স থেকে আমদানির সুযোগ থেকে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এ সব প্রতিষ্ঠানকে এলসি লিমিটের বাইরে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।

সাপ্লাই চেইনে সিকিউরিটিতে জাতীয় স্ট্রাটেজি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে শেখ ফাহিম আরও বলেন, ব্যাংকিং সুবিধাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অন্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তা পেলে স্বল্পমেয়াদে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব। তবে দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো সাপ্লাই চেইন নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করা যেতে পারে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্য প্রায় ১৪ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার এবং রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৩১ মিলিয়ন ডলার। দেশের প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাতের ফেব্রিক্স ও সিনথেটিক ইয়ার্নের প্রধান উৎস্য চীন। পোশাক খাতে বিশেষ করে ওভেন খাতের কাঁচামালের যোগানের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ এবং নিট খাতে ১৫-২০ শতাংশের উৎস চীন।

অবশ্য চীনের সঙ্গে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়ায় এর আর্থিক ক্ষতি এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। অন্যদিকে এ বিষয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ব্র্যান্ডগুলো কতটুকু সহানুভূতিশীল হবে, তাদের ডিসকাউন্ট বা বিমানে পাঠানোর প্রয়োজন হবে কিনা- তা বিবেচনায় নিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার ওপর ক্ষতি পোষাণোর বিষয়টি বিবেচ্য হবে।