নরসিংদী টু ফার্মগেট: পাপিয়ার বহুমুখী অপরাধ সাম্রাজ্য

পুণ্ডকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:২৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৯ বার।

র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে গোপনে দেশত্যাগের সময় গ্রেপ্তার চার অর্থ পাচারকারীর কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। খবর দেশ রুপান্তর অনলাইন

শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী থেকে শুরু করে ঢাকার ফার্মগেট পর্যন্ত তাদের অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। তাদের অপরাধের তালিকা ছিল অনেক লম্বা।

র‌্যাব জানায়, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলিসহ বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও মদ উদ্ধার হয়েছে।

রবিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে গ্রেপ্তার শামিমা নূর পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর দেওয়া তথ্যমতে, রবিবার ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট রুম হতে এবং ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের ‘রওশনস ডমিনো রিলিভো’ নামক বিলাসবহুল ভবনের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার  টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়’।

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সমন্ধে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকা সত্ত্বেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে। ফার্মগেট এলাকার ২৮ ইন্দিরা রোডে তাদের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দুটি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ও নরসিংদীর বাগদী এলাকায় দু কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট আছে বলে জানায়। এ ছাড়া তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারত্বে তাদের ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামে গাড়ির শো রুমে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে এবং নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’   নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে বলেও তারা জানিয়েছে। এ  ছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়। এ ব্যাপারে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে’।

র‌্যাব আরো জানায়, ‘অনুসন্ধানকালে গ্রেপ্তার হওয়াদের অধিকাংশ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতে দেখা যায়। সবশেষ গত বছর ১২ অক্টোবর থেকে এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন হোটেল ওয়েস্টিনের কয়েকটি বিলাসবহুল রুমে অবস্থান করে এবং আনুষঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করে’।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে তারা পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে মোট ১১ লাখ, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকাসহ ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে’।

সাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘তাদের আয়ের আরেকটি উৎস হচ্ছে নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করান। তারা ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কম বয়সী মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। যাদের অধিকাংশই নরসিংদী এলাকা থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব অনৈতিক কাজে কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়’।

তাদের গড়ে তোলা ক্যাডার বাহিনীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী এর নরসিংদী এলাকায় ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামক একটি ক্যাডার বাহিনী আছে। যাদের মাধ্যমে তারা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সব প্রকার অন্যায় কাজে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তাদের এই ক্যাডার বাহিনীর অনেকের নাম ইতিমধ্যে জানা গেছে, যাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র‌্যাব অভিযান অব্যাহত আছে।  তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন’।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাল মুদ্রা রাখা, অর্থ পাচার ও অবৈধ পিস্তল রাখার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ মামলা করবে’।

নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাকরি দেওয়ার কথা বলে গ্রাম থেকে নারীদের নিয়ে এসে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করাত। তাদের ৩০ থেকে ৮ হাজার টাকা মাসোহারা দিত। ভুক্তভোগীরা ভয়ে মুখ খুলতে চাইছে না’।