করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে যে ১৪ খাতে প্রভাব পড়েছে

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২০ ১২:৪৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৭ বার।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিচ্ছিন হয়ে আছে চীন। দীর্ঘ তিন মাস ধরে চীনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ আপাতত বন্ধ রেখেছে বিশ্ব।

যে কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চীনের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানিকারক দেশগুলো মহাসংকটে পড়েছে। চরম হুমকিতে পড়েছে কিছু কিছু খাত।

এদিকে ভাইরাসটি চীনের সীমান্ত পেরিয়ে এখন ৫৬টি দেশে বিস্তার লাভ করেছে। যে কারণে শুধু চীনের সঙ্গে যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রয়েছে তাই বন্ধ হয়নি, ভাটা পড়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও।

এই পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের কয়েকটি খাতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশের ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে এ কথাই জানানো হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সঙ্গে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাঁচামাল সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায়। তাই উৎপাদন সংকুচিত হয়ে আসছে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে কোনো কোনো খাতে উৎপাদন নেমে শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনটি বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠিয়েছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

এ প্রতিবেদনে বেশকিছু খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে। আর সেসব খাতে ক্ষতির মোকাবেলায় সরকারের নীতিসহায়তা চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের কারণে সেসব খাত সম্ভাব্য ক্ষতির সম্মুখীন তা তুলে ধরা হলো-

গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স শিল্প

প্রতি বছর গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং খাতে চার বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানি করে বাংলাদেশে। যার ৪০ শতাংশই আসে চীন থেকে। করোনা ঝুঁকিতে কাঁচামাল প্রাপ্তি এই ঘাটতি এই শিল্পে উৎপাদন সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে এ শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দেড় হাজার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

তৈরি পোশাকের ওভেন খাত

করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এ খাতের ৬০ শতাংশ কাঁচামালই আসে চীন থেকে। যা এখন প্রায় বন্ধ রয়েছে। করোনা প্রভাব আরো চলতে থাকলে এ খাতে উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসতে পারে। ক্ষতির পরিমাণ হবে সবচেয়ে বেশি।

তৈরি পোশাকের নিট খাত

নিট খাতের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। এছাড়া নিট ও ডাইং কেমিক্যাল এবং অ্যাক্সেসরিজের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে। এ খাতেরও ক্ষতি নিরূপণের বিষয়টি চলমান।

ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডস শিল্প

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডস শিল্পের তৈরি পণ্যের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ রফতানিহয় চীনে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস শিল্প

চীন থেকে কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস খাতে প্রতি মাসে আমদানির পরিমাণ ২০০ কন্টেইনারেরও বেশি। যার মূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। বর্তমানে চীন থেকে এসব পণ্য আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে।

লাইভ অ্যান্ড চিলড ফুড শিল্প

করোনাভাইরাসের কারণে এ খাতটি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ কাঁকড়া ও কুচে চীনে রফতানি হয়। আর গত ২৫ জানুয়ারি থেকে সেই রফতানি বন্ধ রয়েছে। তাই স্থানীয় বাজারে নামমাত্র মূল্যে কাঁকড়া ও কুচে বিক্রি করা হচ্ছে। পণ্যগুলো রফতানি করতে না পারায় গত এক মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকার জীবন্ত কাঁকড়া ও কুচে মারা গেছে। মজুত করা পণ্য রফতানি করতে না পারলে ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

প্লাস্টিক শিল্প

কাঁচামাল ও মেশিনারিজসহ বিভিন্ন মেশিনের স্পেয়ার পার্টস যেমন- ইনজেকশন মোল্ডিং, প্রিন্টিং, এক্সটরশন মেশিনের পার্টস চীন থেকে আনতে হয়। এসব পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ সেক্টর হুমকির সম্মুখীন।

ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স শিল্প

বাংলাদেশে আমদানি করা মেশিনারি ও স্পেয়ার পার্টসের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ চীন থেকে আসে। আমদানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ থাকায় এ খাত স্থবির হয়ে পড়েছে।

কম্পিউটার ও কম্পিউটার অ্যাক্সেসরিজ শিল্প

একইরকম প্রভাব পড়েছে কম্পিউটার খাতে। এ খাতে চীনের ওপর প্রায় পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকায় কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, অ্যাক্সেসরিজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স

মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট চীন থেকে বার্ষিক প্রায় ২৫ কন্টেইনার আমদানি করতে হয়। বর্তমানে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রম চলমান।

ইলেকট্রনিক্স শিল্প

টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, ওভেন, চার্জারসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ৮০ ভাগই আসে চীন থেকে। আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।

মুদ্রণশিল্প

বছরে প্রায় ১৮০ কোটি ডলারের মুদ্রণশিল্পের কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। বর্তমানে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার।

জুট স্পিনার্স শিল্প

চীনে বছরে প্রায় ৫৩২ কোটি টাকার জুট স্পিনার্স পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। চীনে রফতানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ থাকায় সে রফতানিও বন্ধ রয়েছে।

চশমাশিল্প

চশমাশিল্পের কাঁচামালের প্রায় পরোটাই আসে চীন থেকে। বর্তমানে চীন থেকে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রমও কমিশনে চলমান।

প্রতিবেদনের বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এক গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীসহ সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাজ করছে সরকার।

এজন্য বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের বিশেষ নীতিসহায়তা, ঋণসহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।