মঞ্চস্থ হলো প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’

আকতারুজ্জামান সোহাগ
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৩৪ বার।

আড়াই হাজার বছরের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে মঞ্চায়ন হলো প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’। ড. সেলিম মোজাহারের রচনা ও লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ভাসু বিহারে। মহাস্থান নাটকে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাসকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।শনিবার সন্ধ্যায় একই স্থানে  নাটকের ২য়  মঞ্চায়ন হবে।
মহানাটক ‘মহাস্থান’ নানা কারণে অধিকতর গুরুত্বের দাবি রাখে। প্রথম কারণ নাটকের বিষয়বস্তু। এ নাটকটিতে শিকার যুগ থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যন্ত তুলে ধরা হয়েছে। ফলে নাটকটিতে দর্শকের চোখ প্রাচীন যুগ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত  ছিল। নাটকে মহাপরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন শাসনসহ বিভিন্ন রাজাদের উপস্থাপন মঞ্চে দেখা যায়। নাট্যকার ‘মহাস্থান’-এ শাসকদের শাসন ও শোষণের দুটি দিকই উন্মোচিত করেছেন। বহুমাত্রিকতার গুণে নাটকে ধর্ম যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে বাঙালি সংস্কৃতির ধারাবাহিক বিকাশ। নাটকটিতে  রামায়ণের গীত, কালিদাসের কাব্য, চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদাবলি, ব্রাহ্মসংগীত, লোকগানসহ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের যথার্থ প্রতিফলন ধারণ করেছে। ‘নাটকটি মহামুনি গৌতম বুদ্ধ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত বিস্তৃত। নাটকে ইতিহাসের মৌলিক উপাদানের সঙ্গে ব্যবহৃত করা হয়েছে লোককথা, লোকশ্রুতি, কল্পনা-কিংবদন্তিসহ নানা সাংস্কৃতিক উপাদান। অসংখ্য চরিত্রের আগমন ঘটেছে এ নাটকে। এর ঘটনাবলিকে ১২টি আখ্যান ও ২৪টি উপ-আখ্যানে বিন্যাস করা হয়েছে।’ সুবিশাল ইতিহাস ও জমকালো উপস্থাপনের কারণে নিশ্চিত করে বলা যায়, ‘মহাস্থান’ দেখে নতুন প্রজন্ম সহজেই আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অর্থবহ ধারণা লাভ করতে পেরেছে।
‘মহাস্থান’ নাটকে শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা কম নয়। নাটকটিতে যুক্ত ছিলেন ৩৫০ শিল্পী ও কলাকুশলী। তারা ‘মহাস্থান’ মঞ্চস্থের জন্য বছরব্যাপী মহড়া করেছেন। বিপুলসংখ্যক শিল্পীর অভিনয়ে এবং মহাস্থানগড়ের বৃহৎ পরিসরে উপস্থাপনের কারণে ইতিহাস-ঐতিহ্যনির্ভর নাটকটি মহাকাব্যিক স্বাদ পেয়েছে। ‘মহাস্থান’ নাটকের ধারা বর্ণনা করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।  মনে করে দেওয়া ভালো, বাংলাদেশে প্রত্ননাটক নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি। ‘সোমপুর কথন’ আর ‘উয়ারী-বটেশ্বর এর হাত ধরে হাজির হয়েছে ‘মহাস্থান’। আগের নাটকগুলোর তুলনায় সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক আবেদনও এর বেশি। সে কারণে নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘মহাস্থান’ নাটকটি প্রত্ননাটকের ধারায় অর্থবহ একটি পালক যুক্ত করল।

নাটকের শেষ ৫ মিনিট বেশি মনে ধরেছে। নাটকের সারকথা দেখা গেল এ সময়টাতে। মঞ্চের এক-একটা অংশে আলো জ্বলে আর দেখা যায় নানা সময়ের চিত্র। ঠিক মাঝখানে একজনের প্রতীকী পদচারণ (মাইম)। যেন তিনিই আড়াই হাজার বছরের পান্থজন। নেপথ্যে ভেসে আসে সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাপাঠ। ভরাট কণ্ঠে একজন পাঠ করেন, ‘…এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ আমি কি তেমন সন্তান/যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান; তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি/চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।’ কবিতার পাশাপাশি পুরো নাটক তথা আড়াই হাজার বছরের গল্পটা আরেকবার দেখলেন দর্শক। শেষে সব শিল্পী এবং দর্শক মিলে জাতীয় সংগীত গেয়ে ওঠেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নাটকটির মঞ্চায়নের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মঞ্চসারথি নাট্যজন আতাউর রহমান, বিশিষ্ট নাট্যজন অধ্যাপক আবদুস সেলিম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, অতিঃ পুলিশ সুপার গাজীউর রহমান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়া।
উদ্বোধনী মঞ্চায়নে কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, 'বগুড়া আমার খুব প্রিয় শহর। বগুড়ার মাটি যেমন উর্বর এর সংস্কৃতির ইতিহাসও অনেক পুরনো। মহাস্থান হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলমান তিনটি সভ্যতার শিল্প পিঠস্থান।  তাই এই স্থানকে নিয়ে নির্মিত নাটকটি বিশেষ গুরুত্ববহ। '