বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভারতীয় নাগরিকের সৌদিতে পাড়ি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০ ১৩:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৮ বার।

ভারতীয় এক নাগরিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছেন। রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে হাফিজ আহমেদ (৪৯) নামে ওই ভারতীয় ব্যক্তির পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। তারপর পাসপোর্ট অফিস থেকে তার সব নথিপত্র গায়েব করে দেয়া হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়েছে। খবর যুগান্তর অনলাইন 

তদন্তে অবৈধ এই কাজের সঙ্গে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের তৎকালীন একজন সহকারী পরিচালকসহ সাতজন কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই হাফিজ আহমেদ নামের ওই ভারতীয় সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আটজনের নামে মামলা হয়েছে।

এর আগে বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলার অনুমোদন দেয়। পরদিন বৃহস্পতিবার প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী সংস্থার সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহারে ভারতীয় নাগরিক হাফিজ আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ হোসেন। মা জয়নব বেগম। মামলার এজাহারে তাকে একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ভারতীয় ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের ঠিকানায় হাফিজকে পাসপোর্ট দেয়া হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম, উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার হোসেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আলমাস উদ্দিন, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল ওয়াদুদ, অফিস সহকারী হুমায়ূন কবির, এমএলএসএস রঞ্জু লাল সরকার এবং দফতরি ইব্রাহিম হোসেন।

এদের মধ্যে আবজাউল আলম বর্তমানে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক। দেলোয়ার আগারগাঁও অফিসের সুপারিন্টেনডেন্ট। আর আলমাস উদ্দিন জয়পুরহাট, আব্দুল ওয়াদুদ রাজশাহী এবং ইব্রাহিম গোপালগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত। আর হুমায়ুন ও রঞ্জু সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় আছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৬ জুন হাফেজ আহমেদ রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ব্যাংক ড্রাফট না থাকলেও পরদিন এমএলএসএস রঞ্জু লাল সরকার আবেদনটি গ্রহণ করে নিজের হেফাজতে রাখেন।

সেদিনই গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ওই পাসপোর্ট করে দেয়ার ব্যাপারে তার অবৈধ লেনদেনের চুক্তি হয়। পরে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে রঞ্জু নিজেই ভারতীয় হাফিজের জন্ম সনদ তৈরি করেন এবং ১৩ জুন তিনি ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করেন।

পরে রঞ্জু আবেদনটি দেলোয়ারকে দেন। দেলোয়ার ৩১ জুলাই পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদনটি নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠান। পরবর্তীতে পুলিশের প্রতিবেদনে হাফিজকে ভারতীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু ওই প্রতিবেদন কম্পিউটার সিস্টেমে ইনপুট করেননি অফিস সহকারী হুমায়ুন কবীর। তাই ১৬ আগস্ট আবেদনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হয়ে যায়। ৩০ আগস্ট সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আলমাসের মাধ্যমে হাফিজের আবেদনপত্রে বাড়ির নম্বর পরিবর্তন করে চূড়ান্তভাবে আবেদনপত্রটি গ্রহণ করেন।

শুরু হয় পাসপোর্ট তৈরির কার্যক্রম। ৭ সেপ্টেম্বর রেকর্ড কিপার ইব্রাহিমের ইউজার আইডি থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি করা হয়। রঞ্জু লাল সরকার নিজেই পাসপোর্টটি গ্রহণ করে হাফিজ আহমেদকে দেন। এরপর ভিসা নিয়ে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি হাফিজ সৌদি আরব চলে যান। পরে তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন কিনা-এ রকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দুদক জানিয়েছে, মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে পুলিশি প্রতিবেদন গোপন করে অবৈধভাবে পাসপোর্টটি দেয়া হয়েছে। পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যাবার পর হাফিজের সব রেকর্ডপত্র গায়েব করে দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি ধরা পড়লে পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর তদন্ত করেছে।

অধিদফতরের উপপরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেন ও ডাটা সেন্টারের অ্যাসিস্ট্যান্ট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি এই ঘটনার জন্য পাসপোর্ট অফিসের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করেছেন। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযোগ পেয়ে প্রথমে দুদক অনুসন্ধান করে। এ সময় প্রাথমিকভাবে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। তারপর কমিশন মামলা অনুমোদন করে। এরপরই মামলাটি হলো। এখন এ মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। আর তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র প্রস্তুত করবেন। এই পাসপোর্ট ইস্যুর সঙ্গে আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।