সাংবাদিকদের চাটুকারিতায় চাটুকাররাও লজ্জা পায়: ফখরুল

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২০ ১২:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৪ বার।

‘সাংবাদিকতা পেশায় চাটুকারিতা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে পেশাদার চাটুকাররা লজ্জা পায়’- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

শুক্রবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, সংবাদপত্র এখন সংবাদকর্মীদের হাতে নেই, ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। নিজেদের ব্যবসা রক্ষার জন্য সরকারের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় তাদের নেই। 

তিনি বলেন, ‘যে কারণে আমরা সেলফ সেন্সরশিপ দেখছি। সম্পাদক সাহেব নিজেই বলেন যে, এটা নেওয়া যাবে না, দেওয়া যাবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে, চাটুকারিতা এমন এক পর্যায় চলে গেছে বাংলাদেশে সেখানে দেখবেন যে, প্রফেশনাল চাটুকার যারা আছে তারাও লজ্জা পায়। দিজ আর ফ্যাক্ট।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের দুই-একজন সাংবাদিক নেতা তারা এখন অনেক ওপরে উঠে গেছেন বিত্তের দিক থেকে।’ 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন যখন হচ্ছে তখন সাংবাদিকতা সম্ভবত সবার চেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাষ্ট্রের কাঠামো এবং সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। এ ছাড়া প্রযুক্তির কারণেও চ্যালেঞ্জ পেতে হচ্ছে। নিউজ পেপারে যারা কাজ করছেন তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। কারণ পরের দিন সকালে তাদের নিউজটি ছাপা হয়, কিন্তু তার আগেই মোবাইল বা অনলাইনে সেই খবরগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে মুক্তচিন্তার যে বাতাস বইছিলো তা সরিয়ে দিয়ে একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ বেশ জানান দিয়ে সারা পৃথিবীতে এসেছে।’

সরকার সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকেরা) আরও ভালো জানেন, কীভাবে ধীরে ধীরে একেকটি আইন তৈরি করে আপনারা (সাংবাদিকেরা) যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যান, যেন সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে না পারেন তার ব্যবস্থা তারা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সাংবাদিকদের সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখে। ভাষার জন্য আন্দোলনে, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতার লড়াইয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অভূতপূর্ব। আজ অনেক সাংবাদিক বলছেন- আমাদের কি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে হবে! তারা ভাবছেন যারা সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছে তারা মনে হয় ভুল করেছে। কারণ এখানে জীবন ও আর্থিক নিরাপত্তা নেই। সর্বোপরি লেখা ছাপা হবার পর মামলা হবে নাকি গুম হয়ে যেতে হবে- তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন দেশে গণতন্ত্র নেই। একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ দেশকে দখল করে আছে। আমরা যদি ভারতবর্ষের দিকে তাকাই, বলা হতো সেখানে গণতান্ত্রিক প্রাকটিস আছে। সেখানেও এখন দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, বিভিন্ন চ্যানেল বন্ধ করা হচ্ছে, কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীর দিকে তাকালে গত এক দশকে গোটা পৃথিবীতে কর্তৃত্ববাদী সরকার এসেছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তাঁর মত ত্যাগ কেউ করেনি। সেই গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না, যেন এ সরকার তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারে। আপনারা দেখেছেন বিচার বিভাগে কিভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। যেদিন সিনহা সাহেবকে বন্দুকের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য করা হলো সে দিন জুডিশিয়ারি শেষ। আপনারা দেখেছেন তারেক রহমানের মামলায় যে জাজ তাকে খালাস দিয়েছেন তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। আপনারা পিরোজপুরে দেখেছেন কিভাবে সরকারি দলের একজন নেতাকে জামিন না দেয়ার কারণে একজন জাজকে বদলি হতে হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে এবং ওই নেতাকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোতে হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এই অনির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দেয়ার জন্য। তাই সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করবার, গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার, এটিই আমাদের উপযুক্ত সময়।’ 

ফখরুল বলেন, ‘জনগণের লড়াই সংগ্রামে সাংবাদিকরা সবসময় সামনের কাতারে ছিলেন। আমরা তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হই। এখানে বলা হয়েছে ৩৮ জন সাংবাদিক গুম হয়েছেন। চাকুরির নিশ্চয়তা নেই। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার বছরের পর বছর ঝুলে আছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সাংবাদিক ছাঁটাই হচ্ছে। সাংবাদিকরা কাজ করতে পারছে না। অথচ দেখছি দু-একজন সাংবাদিক নেতা বহু উপরে উঠে গেছেন। এটাই বাস্তবতা।’

তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার- দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।’

করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, আমাদের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটা ছড়িয়ে পড়া-এটা মারাত্মক মহামারি শুরু হয়েছে। সচেতনতার মধ্য দিয়ে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে।’

ডিইউজে একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজে একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।