চীনে করোনা রোগীদের সারিয়ে তুলছে কিউবার যে ওষুধ, কিনছে বহু দেশ

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২০ ১৯:২৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৬ বার।

একের পর এক ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে মহামারী করোনাভাইরাসের। যদিও এসব ভ্যাকসিন বা ওষুধের কোনোটি করোনা মোকাবেলায় ১০০ শতাংশ কার্যকরি নয়।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা যে দাবি করেছেন, অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল ওষুধ ক্লোরোকুইন অথবা এইচআইভি দমনের মিশ্র ওষুধ রিটোনাভি কিংবা উভয় ওষুধের সংমিশ্রণ করোনাভাইরাস নিরাময়ে সাফল্য এনে দেবে।

এদিকে জানা গেছে, ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ নামে পরিচিত এক ওষুধ কভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের ওপর প্রয়োগে ব্যাপক সফল হয়েছে। আক্রান্তদের অনেকে নাকি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আরো জানা গেছে, চীনের চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে এই ওষুধটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন।

এ ওষুধ ব্যবহার করে এক হাজার ৫০০ জনের বেশি রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন তারা।

করোনাভাইরাসে কার্যকরি এ ওষুধটি তৈরি করেছে কিউবার সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (সিআইজিবি)।

কিউবাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গ্র্যানমা এসব তথ্য জানিয়েছে। এছাড়াও মেডিকক্রিভিউ, আহোরা ডট কম অনলাইম মাধ্যমেও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ওষুধটি নিয়ে কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল ডিয়াজ-কানেল চীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে টুইট করেছেন।

টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমাদের তৈরি ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ ওষুধটি নভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে। চীনে এখন এই ওষুধ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা এই মহামারী মোকাবেলায় সবসময় চীনের পাশে থাকব।’

কিউবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়কিউবা ফারমা গ্রুপের ড. লুইস হেরেরা মার্টিনেজ বলেন, ‘করোনা রোগ প্রতিরোধে রোগীদের ওপর ৩০টি ওষুধ প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। এসব ওষুধের মধ্যে ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে। এটি ব্যাবহারে চীনে হাজার হাজার করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন।’

ওষুধটির আবিষ্কারক কিউবার হলেও বর্তমানে চীনের জিলিন প্রদেশের চ্যাংচুন হেবার বায়োলজিক্যাল টেকনোলজিতে এটি উৎপাদন করা হচ্ছে।

এমন তথ্য নিশ্চিত করে চীনে অবস্থিত কিউবা অ্যাম্বাসির পক্ষ থেকে টুইট করা হয়, ‘চন্দ্রবর্ষের প্রথম দিনেই কিউবার জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে 'ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ আবিষ্কার করা হয়। দুই সমাজতান্ত্রিক দেশের মধ্যে এক চুক্তির অংশ হিসেবে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে এই ওষুধ। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আমাদের এই ওষুধকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এদিকে এমন খবরের পর সারা বিশ্ব থেকে 'ইন্টারফেরন আলফা টু-বি' ওষুধ কেনার হিড়িক পড়েছে। ল্যাটিন আমেরিকান, ক্যারিবীয় ও ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশ কিউবার কাছ থেকে চিকিৎসা সহায়তার অনুরোধ করে ওষুধটি অর্ডার করেছে।

এ বিষয়ে ১৪ মার্চ ড. লুইস হেরেরা মার্টিনেজ বলেন, ‘সারা বিশ্বের বিপুল সংখ্যক দেশ থেকে এই ওষুধ বিক্রির অনুরোধ পেয়েছি আমরা। ইতিমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালিতে একটি চালান পাঠিয়েছি। ওষুধটি প্রয়োগ শেখাতে কিউবা থেকে চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দলও গেছে সেখানে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধটির সরবরাহ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাও মিটাতে পারব আমরা।’

কী কী উপাদান রয়েছে ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ তে?

জবাবে মার্টিনেজ বলেন, ‘এতে এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি ও সি, হার্পিস জোস্টার বা শিংলস, ডেঙ্গু ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকরি উপদান রয়েছে। এই ওষুধটি মানবদেহের ইন্টারফেরনের প্রাকৃতিক উৎপাদন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো জোরদার করে। এক সময় করোনাভাইরাস রোগীর শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুসকে আর আক্রান্ত করতে পারে না।’