বগুড়ার ৭ আসনের পাঁচটিতেই এবার ধানের শীষের নতুন মুখ

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:১৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৭৬ বার।

বগুড়ায় ৭টি আসনের মধ্যে দু’টি ছাড়া পাঁচটিতেই নতুনদের হাতে ধানের শীষ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ইতিপূর্বে তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকায় একাধিবার নির্বাচন করলেও ধানের শীষ নিয়ে এই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামতে যাচ্ছেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী আজগর তালুকদার হেনা জানান, সোমবার রাতে ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে বগুড়ার ৭টি আসনের জন্য ১৭জনের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি আসনে তিনজন করে করে মনোনয়নপত্র পেয়েছেন। বাকি তিনটি আসনে পেয়েছেন দু’জন করে। দলের কাছে ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নামে মনোনয়নপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

তবে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ায় আসন দু’টিতে চারজনকে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। আর সেই চারজনই নতুন মুখ। তারা হলেনঃ বগুড়া-৬ আসনে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা এবং বগুড়া-৭ আসনে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং একই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোর্শেদ মিল্টন ও গাবতলী উপজেলা বিনেপির সভাপতি আমিনুর ইসলাম তালুকদার। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বগুড়া-৬ আসনে বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান এবং বগুড়া-৭ আসনে মোর্শেদ মিল্টনের হাতেই ধানের শীষ তুলে দেওয়া হচ্ছে। মোর্শেদ মিল্টন জানিয়েছেন তাকে চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক এবং জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্না ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমবার তিনি জনতা মুক্তি পার্টি থেকে নির্বাচন করলেও ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করেন। তবে এবার ওই আসনে তিনি ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামছেন। সেই হিসাবে ধানের শীষের তিন নতুন মুখ। একইভাবে তার বিকল্প হিসেবে বিএনপির যে দু’জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেই বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম আর ইসলাম স্বাধীন নতুন মুখ। তবে ওই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মীর শাহে আলম জানিয়েছেন, সেখানে মাহমুদুর রহমান মান্নাই শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের প্রার্থী হচ্ছেন।
পাশের বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে সাবেক সাংসদ আব্দুল মোমেন তালুকদার খোকাকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তিনি অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন। ফলে বিকল্প হিসেবে তার স্ত্রী মাসুদা মোমেনকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আব্দুল মোমেন তালুকদার খোকার সহসা দেশে ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে নতুন মুখ হিসেবে তার স্ত্রী মাসুদা মোমেনই ধানের শীষ পেতে যাচ্ছেন।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে যে তিনজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দু’জনই নতুন। বাকি একজন ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ওই আসনে একাধিকবার সাংসদ ছিলেন। তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ওই আসনে এবার তাকে ধানের শীষের প্রার্থী না করার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ আসনটিতে মনোনয়নের তালিকায় প্রথমেই রাখা হয়েছে বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেনকে। আর সোমবার গভীর রাতে জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলামকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলামের হাতে ধানের শীষ তুলে দেওয়া হতে পারে। তবে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মোশাররফ হোসেনও শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ওই আসনে জামায়াতের স্থানীয় নেতা তায়েব আলীও ধানের শীষের প্রার্থী হতে চান বলে গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে।বগুড়ার বাকি দু’টি আসনের মধ্যে বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) এবং বগুড়া-৫(শেরপুর-ধুনট) আসনে যে চারজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের দু’জন ইতিপূর্বে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং অপর দু’জন ২০০৮সালে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। ফলে সেখানে পুরোনোদের হাতেই ধানের শীষ তুলে দেওয়া হচ্ছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বগুড়া-১ আসনে তৃণমুলের নেতা-কর্মীদের কাছে সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলামের জনপ্রিয়তা থাকলেও ২০০৮ সালে প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ শোকরানা হাইকমাণ্ডের ‘নেক নজরে’ রয়েছেন বলে প্রচার রয়েছে। ফলে ওই আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তৃণমুল নাকি হাইকমাণ্ডের পছন্দ- কোনটিকে প্রাধান্য পাবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
তবে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে মনোনয়ন পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন। সেক্ষেত্রে ২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী জানে আলম খোকাকে এবার খালি হাতেই ফিরতে হতে পারে। 

বগুড়ায় প্রার্থীতার বিষয়ে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, যাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা সবাই নির্ধারিত সময় ২৮ নভেম্বরের মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিবেন। তবে প্রত্যাহারের আগ মুহুর্তে তাদের মধ্য থেকে প্রতিটি আসনে একজন করে সাতজনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।