গবেষক ও কবি আশরাফ সিদ্দিকী মারা গেছেন

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২০ ০৮:০০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৭ বার।

লোক গবেষক ও কবি আশরাফ সিদ্দিকী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে তার ‍মৃত্যু হয়।

আশরাফ সিদ্দিকীর মেয়ে তাসনিম সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গবেষক ও কবি আশরাফ সিদ্দিকী বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এক মাস ধরে শ্বাসনালি এবং খাদ্যনালীতে সমস্যা হয়েছিল। অ্যাপোলো হাসপাতালে রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর জানাজার পর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলেও জানান তাসনিম সিদ্দিকী। 

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আমরা বেশি লোক জমায়েত চাইছি না। এ জন্য বাংলা একাডেমিতে মরদেহ নেয়া হচ্ছে না। আমরা চাই, বাবার জন্য সবাই বাসায় থেকেই দোয়া করুন।’

চল্লিশের দশকের শুরুতে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আশরাফ সিদ্দিকী। সাহিত্যিক জীবনে তিনি রচনা করেছেন পাঁচশ এর অধিক কবিতা। বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। একাধারে তিনি প্রবন্ধকার, লোক সাহিত্যিক, ছোটগল্পকার এবং শিশু সাহিত্যিক। রচনা করেছেন ৭৫টি গ্রন্থ এবং অসংখ্য প্রবন্ধ। 

১৯৪৮ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ‘তালেব মাষ্টার’ কবিতা  রচনা করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে গণমানুষের কবি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘গলির ধারের ছেলেটি’ ছোটগল্প লেখক হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ছোটগল্প অবলম্বনে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।

বাংলার মৌখিক লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করার জন্য ড. আশরাফ সিদ্দিকী বিশেষভাবে সমাদৃত। তার লেখা বইগুলো- ‘লোকসাহিত্য’, ‘বেঙ্গলী ফোকলোর’, ‘আওয়ার ফোকলোর আওয়ার হেরিটেজ’, ‘ফোকলোরিক বাংলাদেশ’ এবং ‘কিংবদন্তীর বাংলা’ দক্ষিণ এশিয়ার লোক সাহিত্যে গবেষণায় মৌলিক বই হিসেব বিবেচিত হয়।

‘ভোম্বল দাশ: দ্যা আঙ্কল অব লায়ন’ এবং ‘টুনটুনি এন্ড আদার ষ্টোরিজ’ ইত্যাদি গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলার লোকজ গল্পকে বিশ্ব সাহিত্যের ভান্ডারে পৌঁছে দেন। ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত ম্যাকমিলান পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত তার ‘ভোম্বল দাশ’ বইটি ছিল সে বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রীত শিশুদের বইয়ের তালিকায়। পরবর্তীতে এ বইটি ১১টি ভাষায় অনুবাদিত হয়। ৭০ দশকে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’ ও ‘প্যারিস সুন্দরী’ তরুণ পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক,স্বাধীনতা পদক, ইউনেসকো পুরস্কারসহ অর্জন করেছেন অনেক পদক-পুরস্কার।

১৯২৭ সালের ১’লা মার্চ টাঙ্গাইলে নাগবাড়ী গ্রামে কবির জন্ম। তিনি পড়াশোনা করেন শান্তিনিকেতন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি আমেরিকার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

আশরাফ সিদ্দিকী রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, ময়মনসিংহের এএম কলেজ, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক, ডিস্ট্রিকট গ্যাজেটিয়ারের প্রধান সম্পাদক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট, নজরুল একাডেমির আজীবন সভাপতি এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন।