করোনা আতঙ্কে বগুড়ায় বাজারে ভিড়: দাম বেড়েছে নিত্যপন্যের

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২০ ১৬:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪০৫ বার।

রোকেয়া বেগম সপ্তাহের কাঁচা বাজার একদিনেই করেন। সাত দিনের সব্জি একসাথে কিনতে হয় বলে পাইকারী বাজারকেই তিনি প্রাধান্য দেন। কারণ অন্যান্য বাজারের তুলনায় পাইকারী বাজারে কিছুটা কম দামে পণ্য কেনা যায়। কিন্তু আজ দুপুরে বাজারে এসেই রোকেয়া বেগম যেন চমকে উঠলেন। লোক সমাগম দেখে মনে হচ্ছে এ যেন কোনো উৎসবের বাজার। প্রতিটি ক্রেতার হাতেই বড় বড় ২-৩টি থলে। কেউবা বস্তা নিয়ে এসেছেন বাজার করতে। সবকিছুই কিনছেন অতি মাত্রায়। তখন রোকেয়া বেগমের মনে পড়ে গেল কয়েকদিন থেকেই দেশের প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সোস্যাল মিডিয়া এবং আশে-পাশের সবার মুখে মুখে করোনাভাইরাসের কথা শুনছেন। এই ভাইরাসটি বিশ্বে সংকটের পর এবার বাংলাদেশকেও না কী সংকট ফেলতে যাচ্ছে। এই গুজবটি এখন লোকের মুখে মুখে। এই ভয় থেকে তিনি নিজেও অন্য সপ্তাহের তুলনায় সবজিসহ অন্যান্য পণ্যও একটু বেশি করেই কিনেছেন বলে জানালেন গৃহিণী রোকেয়া বেগম।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া শহরের পাইকারী বাজার ‘রাজা বাজার’ রোকেয়া বেগমের মত একই রকমের কথা জানালেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাব্বি আল ফাহাদ। সহকর্মি, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের কথা অনুযায়ী তিনি চাল, ডাল, আটা, চিনি, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, পিয়াঁজ, আলুসহ আরও কিছু পণ্য কিনেছেন যেন দুই-তিন মাস অনায়াসে চলে যায়। 


করোনাভাইরাস আতংকে বগুড়ার ওই বাজারের মত প্রতিটি বাজারেই গত দুইদিন থেকে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েই চলেছে। গতকাল সকাল থেকে যেন বাজারগুলো ছিল উপচেপড়া ভিড়ে জনসমুদ্র। এই সুযোগে কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে বেশ কিছু পণ্যের দাম। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চালের দাম। প্রতিটি চালই কেজি প্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকমাস জুড়ে উর্দ্ধমুখী পেঁয়াজের দাম কমে স্থিতিশীল অবস্থায় আসার আগে আবারও বাড়া শুরু করেছে। একদিন আগের ৩০টাকা কেজির পেঁয়াজ গতকাল সকালে ৩৫, দুপুরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি পাইকারী দরেই বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। এছাড়া আলুর দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে চাল, আলু ও পিঁয়াজের দাম বাড়লেও অন্যান্য পণ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল।


বগুড়া রাজা বাজারের চাল বিক্রেতা রতন জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে মানভেদে প্রতিটি চাল কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গোদারপাড়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী শাহরিয়ার হাসান খন্দকার ফুয়েল জানান করোনাভাইরাস আতংকের কারণে সবাই খাদ্য মজুদ রাখার জন্য বেশি বেশি চাল কিনছে। এ কারণে মিল মালিকরাই চালের দাম বেড়ে দিয়েছে। ফুয়েল বলেন, ‘গত সোমবার থেকে আমরা মিলেই বেশি বেশি দামে চাল কিনছি, তাই বাড়তি দামে আমাদেরও বিক্রি করতে হচ্ছে’। ফুয়েল জানান, গত সপ্তাহে উনপঞ্চাশ চাল ৩২শ’ টাকা বস্তা (১০০ কেজি) বিক্রি হয়েছে, এই সপ্তাহে প্রতি বস্তায় ৪শ’ টাকা বেড়ে ৩৬শ’ টাকা, কাটারীভোগ চাল ৪শ’ টাকা বেড়ে ৪৭শ’ টাকা বস্তা, আটাশ জাতের চাল ৩৪ টাকা বস্তা থেকে বেড়ে ৩৮শ’ টাকা, মিনিকেট ২২শ’ থেকে বেড়ে ২৫শ’ টাকা বস্তা, পাইজাম ৪ হাজার টাকা বস্তা ছিল সেটা বেড়ে এখন ৪৪শ’ টাকা বস্তা এবং মোটা জাতের চাল ২৪ টাকা কেজি থেকে বেড়ে এখন ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আলু গত সপ্তাহে প্রকার ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার  বাজার ঘুরে দেখা গেছে আলু কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পাল্লা বিক্রি হচ্ছে।  

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত বাজার মনিটরিং কমিটির সদস্য ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ- সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ জানান, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ রয়েছে। এই নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের শঙ্কার কোন কারণ নেই। তিনি ব্যবসায়ীদের একদিনে সব পণ্য বিক্রি না করা এবং ক্রেতাদের ১০ জনের পণ্য একা না কেনার অনুরোধ করেছেন। সেই সাথে তিনি ব্যবসায়ীদের বিবেক জাগ্রত করে বেচাকেনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান,বাজার মনিটরিং কমিটির তদারকি অব্যাহত থাকবে।