করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ১৬ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২০ ১৭:৩৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৮ বার।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বর্তশানে দেশজুড়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রার্থীদের জনসমাগম এড়িয়ে প্রচার চালানোর নির্দেশনা দেয়। তবে তারাই নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করছে না। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার থেকে আগামী ছয় দিনের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে মোট ১৬ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেবেন। খবর দেশ রুপান্তর।

নগরের চারটি ভেন্যুতে পৃথকভাবে এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয়, কুলগাঁও সিটি করপোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিডিএ পাবলিক স্কুল ও পাহাড়তলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

সব ভেন্যুতে ১৬ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। যেখানে প্রায় সবাই অনেকটা অসহায় ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সকালে নগরের খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ২৫টি কক্ষে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি রুমে ৩০ থেকে ৪০ জন করে একসঙ্গে বসে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নির্বাচনে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার ও ভোটগ্রহণ পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়ে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন প্রশিক্ষকরা। এতে ইভিএম মেশিন নিয়ে একসঙ্গে ১৫/২০ জনের জটলা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে মানুষ শঙ্কিত, সেখানে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ হওয়াটা সত্যিই দুঃখজনক। চাকরি করি বলেই তো নির্বাচনী প্রশিক্ষণে আসতে হচ্ছে। নইলে আসতে হতো না। যেখানে আমাদের সবার মাঝে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে, সেখানে এই নির্বাচনী প্রশিক্ষণে আসা অনেকটা ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়েই আসা। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মানবিক হওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি। 

মো. সাইফুল্লাহ নামে এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমনের কারণে সারাবিশ্ব যেখানে স্তিমিত। অনেক দেশে নির্বাচন স্থগিত করেছে। ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন , কেন এমন করছে, তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদেরও তো পরিবার, সন্তান-সন্ততি আছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেখবে?’

নির্বাচন কমিশনের এসব বিষয় মাথায় রেখে শিগগিরই চসিক নির্বাচন স্থগিত করা প্রয়োজন বলেও মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নি কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, পূর্বনির্ধারিত শিডিউল অনুসারে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১৬৩ জন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

করোনা আতঙ্কে নিয়ে জনসমাগমের বিষয়টি মানা হচ্ছে না কেন? এর উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। কমিশন নির্বাচন স্থগিত না করলে আমাদের কোনো সুযোগ নেই। তফসিল অনুযায়ী আমাদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিন ধাপে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। দুইদিন করে প্রশিক্ষণের প্রতি ধাপে সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এ প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। পাঁচ শতাংশ অতিরিক্তসহ মোট ১৬ হাজার ১৬৩ ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। যেখানে সবাই প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে দক্ষিণ পাহাড়তলী, জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, মোহরা, পূর্ব ষোলশহর, উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, পাহাড়তলী, পাঠানটুলি, পূর্ব মাদারবাড়ি ও গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

প্রশিক্ষণে মোট ১৬ হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে ৭৭২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৫১৩০ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার এবং ১০ হাজার ২৬১ জন পোলিং অফিসার রয়েছেন।