জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল

শর্ত ভঙ্গ করলে খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২০ ১৬:৩১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৯ বার।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে শর্তে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে, তা ভঙ্গ করলে মুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, মানবিক কারণে দেওয়া মুক্তির পর রাজনীতি করলে তা হবে শর্ত ভঙ্গের শামিল। 

বুধবার সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি। খবর সমকাল অনলাইন

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাজা স্থগিত মানে এই নয় যে, তিনি (খালেদা জিয়া) অন্য সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তার আপিল আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অন্যান্য মামলার কার্যক্রমও অব্যাহত আছে, সেগুলো চলবে। খালেদা জিয়ার সাজাটা শুধু স্থগিত করা হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই ব্যবস্থা সারাবিশ্বে রয়েছে। আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে। তিনি বলেন, সাজা স্থগিত করা হয়েছে ছয় মাসের জন্য। সেই সময় শেষ হলে তিনি আগের অবস্থায় ফিরে যাবেন, যদি না সরকার এটা বর্ধিত করে।

রাজনৈতিক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে মাহবুবে আলম বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে শুনেছি, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভয়ানক খারাপ থাকায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তির আবেদন করা হয়েছে। এ কারণে দণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। এর পরও যদি তিনি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেন, তাহলে পরোক্ষভাবে যে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ, সে আবেদনে এই যুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়ে যাবে।

দুদকের বক্তব্য : দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, শর্ত ভঙ্গ হলেই সাজা স্থগিতাদেশ বাতিল করে বিনা পরোয়ানায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে পারবে সরকার। তিনি বলেন, সরকার যে ধারায় খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করেছে, সেখানে দুটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তিনি চাইলেই দণ্ড স্থগিত থাকা অন্যান্য আসামির মতো চলাফেরা করতে পারবেন না। দুটি শর্তের মধ্যেই তার সবকিছু সীমাবদ্ধ থাকবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়া এখন মুক্ত। তিনি রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দেবেন কি দেবেন না, সেটি তার প্রজ্ঞা।

ফৌজদারি কার্যবিধি : ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ১ উপধারায় আসামিদের দণ্ড স্থগিতের বিষয়ে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হলেও পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো একই ধারার ২, ৩, ৪, ৪ (ক), ৫, ৫ (ক) এবং ৬ উপধারায় বর্ণিত হয়েছে।

এ ছাড়া ৪০১ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, 'যখন কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়, তখন যে আদালত ওই দণ্ড দিয়েছিলেন বা অনুমোদন করেছিলেন সেই আদালতের প্রিসাইডিং জজকে সরকার ওই আবেদন মঞ্জুর করা কিংবা মঞ্জুর করতে অস্বীকার করা উচিত কিনা, সে সম্পর্কে তার মতামত ও মতামতের কারণ বিবৃতি করতে এবং এই বিবৃতির সঙ্গে বিচারের নথির নকল অথবা যে নথি বর্তমানে আছে সেই নথির নকল পাঠানোর নির্দেশ দেবেন।' ফলে ৪০১ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি আদালতকে জানাবে সরকার।

মঙ্গলবার দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না- এমন শর্তে বয়স ও মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

বুধবার বিকেলে কারাগার থেকে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। দেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম উদাহরণ যার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দিল সরকার। করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের এমন মুক্তি স্বস্তি দিয়েছে বিএনপিকে।