শূণ্য দশকে বগুড়ায় লেখালেখিতে ভাটা পড়েছে

নাহিদ হাসান রবিন
প্রকাশ: ২৪ মে ২০১৮ ১৩:৫২ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৮৭২ বার।

বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে বগুড়ার লেখকরা অন্যান্য জেলার চেয়ে পিছিয়ে নেই মোটেও। ষাটের দশক থেকে ইদানিং সময় পর্যন্ত যারা বাংলা সাহিত্য চর্চা করে আসসেন তাদের মধ্যে বগুড়ার অনেকেই আছেন। হয়ত পরিচর্যার অভাবে, অনাদরে, অবহেলায় এখানকার অনেক লেখকই ঝরে গেছেন। আবার নতুন লেখক হয়ে উঠেছেন অনেকেই। প্রত্যেক এলাকাতেই কিছু লেখক আছেন, যারা নিয়মিতভাবে লেখালেখি করে থাকেন এবং তাদের অনেক বইও প্রকাশ পেয়েছে। তবে তাদের সেই লেখা মানদ-ের বিচারে আদৌ কোন লেখা হয়ে ওঠে কিনা, তা ভাবার বিষয় আছে। এমন লেখক বগুড়াতেও অনেক আছে। তাদের কথা বলছি না, সারা দেশের পাঠক সমাজের কাছে যারা লেখনির মাধ্যমে পরিচিত হতে পেরেছেন, তাদের কথা বলছি। সেদিক থেকে বগুড়া পিছিয়ে নেই মোটেও, বরং বেশ এগিয়ে আছে বলা যায়।

ষাটের দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রত্যেক দশকেই বগুড়ার কিছু উলে¬খযোগ্য লেখক রয়েছেন। যারা তাদের সৃজনশীল লেখনি দিয়ে পাঠক হৃদয়ে জায়গা তৈরি করতে পেরেছেন খুব অনায়াসেই।

ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত বগুড়াতে বেশ কিছু ভালো লেখক ছিল। তাদের মধ্যে মনোজ দাশ গুপ্ত, কাজী রব, ফারুক সিদ্দিকী, মুহম্মদ আব্দুল মতিন, আনওয়ার আহমদ, বজলুল করিম বাহার, মুহম্মদ রহমতুল বারী, সুবোধ লাহিড়ী, মুহম্মদ আব্দুর রঊফ, মিনতি কুমার রায়, মুহম্মদ শহীদুল¬াহ, শ্যামল ভট্টাচার্য, রেজাউল করিম চৌধুরী, আয়েশা আশরাফ, রোমেনা আফাজ, জি.এম. হারূন, মনজু রহমান, নূর মোহাম্মাদ তালুকদার, আজিজার রহমান তাজ ও খৈয়াম কাদের উলে¬খযোগ্য। এসব লেখকদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। বেঁচে আছে তাদের অমর সৃষ্টিগুলো। যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রত্যেকেই লেখালেখি ধরে আছেন এখনো। আশির দশকে দস্যু বনহুর সিরিজ লিখে তো রোমেনা আফাজ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। মিনতি কুমার রায় এর সাহিত্য ও সমালোচনা তত্ব গ্রন্থটিও ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিল। যা অনার্স পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে সহপাঠ্য হিসেবে ব্যাবহৃত হয়।

স্মৃতি থেকে অনেক লেখকের নাম হয়তো হারিয়ে গেছে, বা অনেক লেখকের লেখার সাথে হয়তো পরিচয়ই নেই, তাই এই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে যদি কারো নাম বাদ পড়ে থাকে, তা ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল।


নব্বই দশকের দিকে বগুড়ার একঝাঁক লেখক বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। তাদের মধ্যে পিয়াল খন্দকার, সাজ্জাদ বিপ¬ব, শিবলী মোকতাদির, পান্না করিম, ফখরুল আহসান, জয়ন্ত দেব, ইসলাম রফিক, মিতা নূর, সাহাব উদ্দিন হিজল ও কামরুজ্জামান মাসুম উলে-খযোগ্য। এদের মধ্যে দু-একজন এই অঙ্গন থেকে সরে গেলেও বাঁকিরা নিয়মিত লিখে চলেছেন। শিবলী মোকতাদির তো কবি হিসেবে যেমন পরিচিতি লাভ করেছেন, তেমনি পরিচিতি লাভ করেছেন একজন ভালো প্রাবন্ধিক হিসেবেও।

লেখকদের এই লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে কিছু ভালো মানের ছোটকাগজ। যা সারা দেশের লেখক-পাঠকদের কাছে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছে। এসব ছোটকাগজের মধ্যে, ফারুক সিদ্দিকী সম্পাদিত- বিপ্রতীক (৩৭টি), ইসলাম রফিক সম্পাদিত- দোঁয়াশ (৮টি চলমান), নাহিদ হাসান রবিন সম্পাদিত- অপরাজিত (১৭টি চলমান) অচিন্ত চয়ন সম্পাদিত- অদ্রি (৪টি), মিতা নূর সম্পাদিত- চার অপরাজিতা (৩টি সংখ্যা), আজিজার রহমান তাজ সম্পাদিত- মল্লি¬কা, জয়ন্ত দেব সম্পাদিত- দ্যুতি, প্রান্তিক অরণ্য সম্পাদিত- বিবর, ঈশান সামী সম্পাদিত- অভিজনসহ এলোমেলোভাবে আরও কিছু ছোটকাগজ প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন থেকেও প্রকাশ পেয়েছে কিছু ছোটকাগজ। একটা জেলা শহর থেকে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতার বাইরে এতগুলো ছোটকাগজ প্রকাশ পাবার পরেও, লেখালেখিতে অনেকটা ভাটা পড়ে শূণ্য দশকে এসে। তখন বগুড়া লেখক চক্র, শেরপুর সাহিত্য চক্র, অপরাজিত শিল্প-সাহিত্য পরিবার, উষসী সাহিত্য সংসদ সহ বেশ কিছু সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সেসব সংগঠনে নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/মাসিক সাহিত্য আসর হয়। যেখানে স্বরচিত লেখা পাঠ শেষে সমালোচনার একটা পর্ব থাকে। যা থেকে নতুন বা পুরাতনরা তাদের লেখনীকে মজবুত করার কৌশল খুঁজে পায় অনায়াসে। ঠিক সেই সময়ে একঝাঁক তরুণ লেখক তৈরিও হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই সময়কার লেখকদের মধ্যে হাতে গোনা দু-একজন লেখক তাদের লেখনি ধরে রাখতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে লতিফ আদনান, নাহিদ হাসান রবিন, মামুন রশীদ ও অচিন্ত চয়ন উল্লেখযোগ্য। অন্যরা বিভিন্ন কারণেই এপথ থেকে সরে পড়েছেন। তখন থেকেই বগুড়ার লেখক তালিকা ছোট হতে থাকে। এই তালিকা ছোট হওয়ার পিছনে যে কারণগুলো খুঁজে পাওয়া যায়, তা হলো- সাংগঠনিক মতবিরোধ, গোষ্ঠী কেন্দ্রিক প্রকাশনা ও লেখকের আমিত্ব ভাব। এসব কারণেই বগুড়ার কিছু সম্ভাবনাময় তরুণ লেখক এপথ থেকে সটকে পড়েছেন। এসব হীন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে, বগুড়ার লেখকরা বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে অনেকেই ধারণা করেন।

শূণ্য পরবর্তী দশকে এসে আবার বেশ কিছু লেখক তৈরি হয়। তাদের সৃজনশীল লেখা খুব অল্প সময়ে পাঠক প্রিয়তা পায়। তাদের মধ্যে, নিখিল নওশাদ, রনি বর্মন, সিকতা কাজল, কামরুন নাহার কুহেলী, আফসানা জাকিয়া, চয়নিকা সাথী, এইচ আলীম ও রোকসানা আক্তার রিয়া উলে¬খযোগ্য।
এসব লেখকের বাইরেও বিভিন্ন দশকের কিছু লেখক অনিয়মিতভাবে বেশ ভালো লিখেছেন বা লিখছেন। তাদের মধ্যে- আজিজুল হক খন্দকার, তারিক নূরুন্নবী, হাছিনা মুর্শেদ, ড. বেলাল হোসেন, ইমরুল হাসান কাজল, রফিক মোহাম্মদ ফিরোজ ও এস.এম. মামুন জাহান পল্লব উল্লেখযোগ্য।