একজন মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৫:০০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৬০ বার।

করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের দেশে কাজ করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এ সব সম্মেলনে কথা বলছেন পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

 

মীরজাদী সেব্রিনা বাংলাদেশি রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের ফেলো। ১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) থেকে রোগতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করে তিন বছর গবেষণা করেন। তিনি নিপসমে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

 

প্রসঙ্গত, ফ্লোরার স্বামী প্রকৌশলী রবিউল আলম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৬ সালে সেব্রিনা ফ্লোরা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহামারী সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও রোগ বিস্তার প্রতিরোধে বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গবেষণা করেন।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ন্যাশনাল পাবলিক হেল্‌থ ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্সের একজন সম্মানিত ফেলো তিনি।

মানুষের জন্যে কাজ করার অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই বাস করছে তার ভেতরে, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারলে খুশি হন তিনি। করোনার উপদ্রবের এই দিনগুলোতে তিনি প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন, সারা দেশের মানুষ সবশেষ তথ্য জানার জন্যে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।

করোনাভাইরাস বাংলাদেশের জন্য কতটুক চ্যালেঞ্জ- এমন প্রশ্নে আইইডিসিআর-এর এই পরিচালক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে মহামারি হিসেবে আখ্যা দেয়ার পর আমার আর এই বিষয়ে বলার কিছু থাকে না। আমরা অধিক জনসংখ্যার একটি দেশ। তাই করোনা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলাটাই আমাদের জন্য যথার্থ হবে।’

করোনা ভাইরাস নিয়ে সবশেষ তথ্য জানতে সারা দেশের মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটাকে কি চাপ হিসেবে নিচ্ছেন তিনি? এমন প্রশ্নে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘একজন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি নিজে থেকেই এক ধরনের তাড়না বা চাপ বোধ করছি। কারণ এই গোটা বিষয়টি আমাদেরসহ সমগ্র পৃথিবীর জন্যই বেশ উদ্বেগের। যেহেতু আমরা এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছি, আমাদের বাড়তি সচেতনতা জরুরি।’

ফ্লোরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মোকাবেলায় সকলের সঙ্গে তিনিও হিমশিম খাচ্ছেন তা স্পষ্ট। এই মুহূর্তে দায়িত্বের তাড়নায় হয়ত স্বাভাবিক জীবন ধারণও তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় অনর্থক সমালোচনায় পড়েছেন। তবু কাজ করে যেতে হবে তাকে। কিছু মানুষকে তো সমালোচনা সহ্য করলে দেশ থমকে যাবে। থমকে যাবে স্বপ্ন। তাই ফ্লোরার মতো নারী বা পুরুষ সকল তীর্যক কথার বাণ সহ্য করেই এগিয়ে চলেন।

প্রাণঘাতী ভাইরাসটি দেশে শনাক্তের আগে থেকেই এ নিয়ে নানা শঙ্কার কথা, এর থেকে বাঁচতে দেশের মানুষকে সচেতন করা এবং এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের কথা প্রতিনিয়ত দেশবাসীর কাছে তুলে ধরছেন এ নারী। সেব্রিনা নিরলসভাবে কাজ করে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামাল দিচ্ছেন এক হাতে। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের এমন কর্মকাণ্ড এই প্রথম নয়। মীরজাদী সেব্রিনার তত্ত্বাবধানেই জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে সফলতা পায় বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কারও অজানা নয়। এখনো তার ব্যস্ততা কমছেই না। বর্তমানে ব্যস্ত আছেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস নিয়ে। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন। চমৎকারভাবে সবকিছু সামাল দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।