নওগাঁয় করোনা সন্দেহে চিকিৎসার অভাবে যুবকের মৃত্যু

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০ ০৬:৫৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৬৯ বার।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কালগ্রাম ইউনিয়নের অলংকার দিঘী গ্রামে করোনা ভাইরাস সন্দেহে ঢাকা থেকে আসা আল আমিন (২২) নামের এক যুবক মারা গেছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই যুবক মারা যায়। পরিবারের অভিযোগ জেলা সদর হাসপাতালসহ তিনটি হাসপাতালে তার কোন চিকিৎসা না করার কারনেই তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত আল আমিন অলংকার দীঘি গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে। এদিকে আল আমিনের মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে আসলে গ্রামের কোন লোকজন করোনা ভাইরাস সন্দেহে তার মৃতদেহের কাছে যাচ্ছে না। কিন্তু আল আমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না সেই পরীক্ষা কোন হাসপাতালের চিকিৎসকরা করে নাই কিংবা কোন নমুনাও সংগ্রহ করে নাই।
আল আমিনের বাবা মকলেছুর রহমান জানান, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। শুক্রবার রাতে আল আমিন শরীরে প্রচন্ড জ্বর আর কাশি নিয়ে খুব অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা থেকে নওগাঁতে এসে পৌছে। এরপর শনিবার সকালে বাড়ীতে আসার সময় সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সন্দেহে স্থানীয় মেম্বার ও গ্রামের কতিপয় লোকজন তাকে গ্রামে উঠতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে সকালেই এলাকার ভেটি স্ট্যান্ড থেকে চিকিৎসার জন্য পাশের বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোন চিকিৎসা না করেই ফিরে দেয় সেখানকার চিকিৎসকরা। এরপর আবারও ছেলেকে ফিরে নিয়ে ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয। সেখানে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না করেই বারান্দায় আল আমিনকে মূর্মূষ অবস্থায় রাখা হয়। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে পরে তার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য প্রথমে রাণীনগর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখানে করোনা ভাইরাস সন্দেহে চিকিৎসকরা দেখেই হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়। নওগাঁ হাসপাতালে পৌছার পর সেখানেও আল আমিনকে ভালো ভাবে না দেখে কোন চিকিৎসা না দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যান বলে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন লিখে দিয়ে চলে যান চিকিৎসকরা। সেগুলো দিয়েও আমার ছেলের শরীরের জ্বর কোন ভাবেই কমে না। এরপর কোন চিকিৎসক আমার ছেলের আশেপাশে আর আসে নাই। অবশেষে আমার ছেলে রাতে মারা যায়। রাতেই মৃত সন্তান নিয়ে গ্রামে ফিরলে তার কাছে কোন লোকজন আসছে না। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, ছেলেটা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এমন খবর পাওয়ার পর তার পরিবারকে বলেছি চিকিৎসকের প্রতিবেদন নিয়ে গ্রামে আসতে। যদি চিকিৎসকরা বলেন আল আমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয় তাহলে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আর যদি সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসা করান। গ্রামে আসার দরকার নেই। গ্রামবাসী ও আশেপাশের মানুষের কথা ভেবেই আল আমিনকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় নাই। 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন (অংকুর) বলেন, আল আমিনের শরীরে ১শত ডিগ্রি সেলসিয়াস উপর জ্বর ছিলো। তাকে যখন আমরা হাসপাতালে পাই তখন সে অবচেতন অবস্থায় ছিলো। যেহেতু তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো সেহেতু আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন মৃত আল আমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার কথা বলবো। তবে সে হয়তো বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। এছাড়াও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আল আমিনের দাফন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।  
নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা: আ: ম: আখতারুজ্জামান বলেন যেহেতু নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই সেহেতু আমরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।