যেভাবে পিয়াল হত্যাকান্ডের খুনীদের ধরলো বগুড়া পুলিশ

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০ ১৩:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৯৯ বার।

বগুড়ায় কবরস্থান থেকে এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার এই শিরোনামে পুণ্ড্রকথা গত ২৮ শে মার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। কিন্তু সেই রিপোর্টে খুনের রহস্য তখনো উদঘাটন হয়নি সেই সাথে কে বা কাহারা খুন করেছে পুলিশও বুঝতে পারেনি।  কিন্তু ঘটনার  তিনদিনের মধ্যেই  মঙ্গলবার  সেই হত্যাকান্ডের রহস্যের জট খোলাসহ খুনীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিভাবে সেই রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে  তা বগুড়া জেলা পুলিশের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশ করা  হয়েছে। হুবুহু তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- 

"ঘটনার সময় ছিলাম তিনজন, একজন মারা গেছে, দুজন এখানে,আপনারা জানলেন ক্যামনে?" 
খুনি দুজনের একজনের জিজ্ঞাসা পুলিশের প্রতি। 
কেন এই প্রশ্নের অবতারণা এবং কী তার উত্তর তা জানতে হলে একটু সময় নিয়ে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। 
গত ২২ মার্চ সকাল ১১টার দিকে অফিসেই ছিলেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী। দুজন ব্যক্তি এলেন তাঁর রুমে। একজন বগুড়ার একটা বড় হোটেলের স্টাফ হবার সুবাদে উনার পূর্ব পরিচিত। তারা একটা ২৭ বছর বয়সী যুবকের হারানো জিডি নিয়ে এসেছেন যিনি গত(২১/৩/২০) রাত থেকে তার নিজস্ব সিএনজিসহ নিখোঁজ। তার নাম আজগর আলী পিয়াল,বাড়ি নিশিন্দারা মধ্যপাড়া। রাত নয়টার দিকে বউ এর সাথে সর্বশেষ কথা হয়েছে, তারপর থেকে ফোন বন্ধ। 
জিডিটা উপশহর ফাঁড়ির এসআই গফুরকে দেয়া হলে তিনি প্রাথমিক তদন্ত শুরু করলেন। করোনা ডিউটির চাপে বাংলাদেশ পুলিশের কোন সদস্যই দম ফেলতে পারছিল না। এসআই গফুর করোনা ডিউটির পাশাপাশি খোঁজ খবর করছিলেন কিন্তু কূলকিনারা হচ্ছিল না। ফোন বন্ধ থাকায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পথও রুদ্ধ। পিয়ালের পরিবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদানসহ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। 
এরকম অবস্থায় গত ২৮ তারিখ শনিবার বিকেলের দিকে সদর থানা পুলিশের কাছে সংবাদ আসে বড় কুমিড়া হিন্দুপাড়া সংলগ্ন একটা ব্যক্তিগত কবরস্থানের ভিতরে একটা অর্ধগলিত মৃতদেহ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে অফিসার ইনচার্জ সদর থানা এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল দ্রুত সেখানে যান। যাওয়ার পথে দুজনের মনে একই সন্দেহ উঁকি দেয় লাশটা পিয়ালের নয়তো? সাথে সাথেই পরিবারকে খবর দেয়া হলে তারাও দ্রুত সেখানে চলে আসেন। পিয়ালের বাবা এবং স্ত্রী সেই অর্ধগলিত মরদেহ এবং পরিধেয় কাপড় দেখে সেটাকে পিয়ালের মরদেহ হিসেবে শনাক্ত করেন। এরপর মরদেহটি পোস্ট মর্টেমের জন্য ডোমের সহযোগিতায় মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেটি এমনভাবে পচে গিয়েছিল যে শুধুমাত্র পুলিশ আর ডোম ছাড়া কেউই কাছে যেতে পারছিল না। করোনা মাস্ক সেদিন সেখানে অবস্থানরত পুলিশদের ভাল কাজে দিয়েছিল। 
সেই রাতেই সদর থানায় একটা অপহরণ পূর্বক হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। 
একদম ক্লু লেস ঘটনা বলতে যা বোঝায় তাই! ইতঃমধ্যে সাত/আটদিন পেরিয়ে গেছে। টিম সদর থানার দিশেহারা অবস্থা। কিন্তু পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম বার এর টিম হাল ছাড়ার টিম নয়। বিভিন্ন জ্বিন ভূত ব্যবহার করে(সঙ্গত কারণেই জানানো যাচ্ছে না) জানা গেল সেই সিএনজি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার কোথাও ব্যবহার হচ্ছে। সদর থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত রেজা গেলেন সেই সিএনজির খোঁজে। সেখানে মুন্না নামক এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেল,সে জানাল সিএনজি সে পেয়েছে বগুড়ার চারমাথা এলাকার রাশেদের কাছ থেকে। রাশেদ এবং হান্নান নামক দুজন তাকে সিএনজিটি পৌঁছে দিয়ে গেছে। তথ্যটি পাওয়ার সাথে অফিসার ইনচার্জ সদর নিজেই অভিযানে গিয়ে তাদের দুজনকেই পাকড়াও করলেন। 
পরদিন সকালে সদর সার্কেল অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলে তারা প্রথমে স্বভাবতই মুখ খুলতে চায়নি। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় মুখ খুললে হান্নান গল্পের শুরুতে যে উক্তিটি আছে সেটার অবতারণা করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে চারমাথা থকে সিএনজিটা নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়,সেখানে বসে নেশা করার একপর্যায়ে হান্নান ইট দিয়ে পিয়ালের মাথায় আঘাত করে মাথা দ্বিখণ্ডিত করে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু ঘটায়। এরপর রাশেদ সিএনজি চালিয়ে গোবিন্দগঞ্জ গিয়ে মুন্নার কাছে হস্তান্তর করে। রাশেদ মুন্নার পূর্বপরিচিত এবং সেই মোবাইলে ডেকে এনে সিএনজি দিয়ে দেয়। মঙ্গলবার ৩১/৩/২০২০ বিকেলে তারা দুজনেই বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।