করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখনো যা জানা যায়নি

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০ ১৩:৫৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৪ বার।

মহামারির যুগ সেই কোথায় ফেলে এসেছিল মানবসভ্যতা, মনে হয় ভুলতেই বসেছিল অনেকে। আবার বিষয়টি যেন অনেকের কাছে বই-পুস্তকে ইতিহাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মানুষের এই নিশ্চিন্ত বাস অল্প কয়েক দিন আগেই তছনছ হয়ে যায়।

সারা বিশ্বই এখন করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ থেকে বাঁচতে লড়াই করছে। একটার পর একটা দেশ নিজেদের বাঁচাতে লকডাউন করেছে। বিশ্বের অধিকাংশ বড় বড় শহরের বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কিন্তু পৃথিবীবাসী করোনাভাইরাস সম্পর্কে নতুন করে সচেতন হয়েছে এই তো সেদিন, গত ডিসেম্বরে।

সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের দিনরাত প্রচেষ্টার পরেও এখনো অনেক কিছুই আমাদের অজানা। এবং আমরা সবাই এখন এসব উত্তর খোঁজার বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানের অংশ। কি সেই প্রশ্নগুলো?

১. প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ সংক্রমিত হয়েছে? :

এটা কোভিড-১৯ নিয়ে মৌলিক প্রশ্ন গুলির একটি। এবং সবচেয়ে জটিলও।

সারা বিশ্বে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা হয়েছে কয়েক লাখ রোগীকে, কিন্তু এটা আসল সংখ্যার একটা অংশ বই কিছুই নয়। অনেকেই আছেন যারা সংক্রমিত হলেও তাদের শরীরে কোন লক্ষণ প্রকাশিত হয় না, অসুস্থ বোধ করেন না। তাদের জন্যই আসল সংখ্যাটা বের করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরে একধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটা পরীক্ষা করার পদ্ধতি বের করা গেলে গবেষকরা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারবেন আসলেই কেউ সংক্রমিত হয়েছে কি না। কেবলমাত্র তখনই আমরা জানতে পারব কত দূর বা কত সহজে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

২. ভাইরাসটি আসলে কতটা মারাত্মক?

যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানতে না পারব ঠিক কতজন মানুষ আক্রান্ত, ততক্ষণ এ রোগে মৃত্যুর সঠিক হারও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এই মুহূর্তে ধারণা করা হচ্ছে শতকরা এক ভাগ আক্রান্তের মৃত্যু হয়। কিন্তু যদি সত্যিই বিশাল সংখ্যক আক্রান্তের কোন লক্ষণ না থাকে, তাহলে হয়তো মৃত্যুর হার আরও কম।

৩. রোগের সবগুলো লক্ষণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে মূলত জ্বর এবং শুকনো কাশিকেই প্রধান লক্ষণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

গলা ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা এবং ডায়রিয়াও দেখা গেছে কারও কারও ক্ষেত্রে। ইদানীং আবার স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি লোপকেও এই রোগের লক্ষণ হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে আসল প্রশ্ন হলো মৃদু, সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো লক্ষণ, যেমন সর্দি বা হাঁচি নিয়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই না জেনেই ভাইরাসটি বহন করছেন। 

৪. শিশুদের ভূমিকা:

শিশুদেরও করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেও তাদের লক্ষণগুলো তীব্র হয় না তেমন, বয়স্কদের তুলনায় তাদের মৃত্যুর ঘটনাও বেশ বিরল। কিন্তু যে কোন রোগের ক্ষেত্রেই শিশুরা রোগ ছড়ায় অনেক বেশি, যেহেতু তারা অনেক মানুষের সাথে মেলামেশা করে (স্কুলে কিংবা খেলার মাঠে)।  কিন্তু এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে তারা রোগ ছড়াতে কতটা ভূমিকা রাখছে তা পরিষ্কার নয়।

৫. নোভেল করোনাভাইরাসের উৎস কি?

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে ভাইরাসটিকে প্রথম দেখা যায়, যেখানে একটি পশু বিক্রয়কেন্দ্রে একগুচ্ছ রোগীর দেখা মিলেছিল।

এখন এই করোনা ভাইরাস, যার বৈজ্ঞানিক নাম Sars-CoV-2, এটি এমন ধরনের ভাইরাস যেটা বাদুড়কে সংক্রমিত করে। ধারণা করা হচ্ছে বাদুড়ের মাধ্যমে এটি কোন অজানা প্রাণীকে প্রথমে সংক্রমিত করে, যা থেকে পরবর্তীতে মানুষও আক্রান্ত হয়। কিন্তু তা ঠিক কীভাবে হলো, তা এখনো অজানা।

৬. গ্রীষ্মে কি সংক্রমণ কমে আসবে?

শীতের সময়েই ঠান্ডা এবং ফ্লু বেশি দেখা যায়, কিন্তু এটা এখনো নিশ্চিত না যে গ্রীষ্মকালে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাবে কি না।

ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টারা বলছেন, মৌসুমের সাথে এই ভাইরাস ছড়ানোর কোন সম্পর্ক আছে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। থাকলেও তা সাধারণ সর্দি-জ্বর বা ফ্লুয়ের চেয়ে কমই হবে। আর যদি গ্রীষ্মে সত্যিই প্রকোপ কমে যায়, তাহলে পরের শীত মৌসুমে তা আবারও বাড়ার শঙ্কা রয়ে যাবে।

৭. কেন কারও কারও ক্ষেত্রে উপসর্গ গুলি মারাত্মক আকার ধারণ করে?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯ এর উপসর্গগুলো খুব হালকা, কিন্তু শতকরা ২০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে তা প্রকট আকার ধারণ করে। কেন?

ধারণা করা হচ্ছে, রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপরেই এটা অনেকাংশে নির্ভর করে। কারও কারও ক্ষেত্রে জিনগত বিষয়ও রয়েছে। এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানা গেলে, কাদের ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে তা নির্ধারণ করা সহজ হতো।

৮. একবার হলে আবার এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা কতখানি?

একবার সংক্রমণ হলে শরীরে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় বটে, কিন্তু তা কতটা দীর্ঘস্থায়ী তা নিশ্চিত নয়।

আক্রান্ত রোগী যদি সুস্থ হয়ে ওঠে, তাহলে তার শরীরে একধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু যেহেতু রোগটি মাত্র তিন-চার মাস ধরে দেখা যাচ্ছে, ফলে একবার সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী আবারও আক্রান্ত হয় কি না এখনই তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

৯. ভাইরাসটি কি আরও বদলাবে?

ভাইরাস সাধারণত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায়, তবে তা তাদের জেনেটিক কোডে বড় কোন পরিবর্তন আনে না।

সাধারণ নিয়মে দেখা গেছে, যে কোন ভাইরাস সময়ের সাথে বদলে গিয়ে আরও কম মারাত্মক রূপেই আবির্ভূত হয়, তবে এটাও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না।

উদ্বেগের কারণ হলো, শরীরে ভাইরাসের যে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, রূপ বদলে ফেললে অনেক সময় তা আর কাজ করে না। ফ্লুয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই যেমনটা হয়।

হয়তো টিকা আবিষ্কার হয়েছে, কিন্তু ভাইরাসটি রূপ বদলে ফেলায় তা আর কাজ করছে না।

সূত্র: বিবিসি।