রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বৈজ্ঞানিক পরামর্শ
পুন্ড্রকথা ডেস্ক
কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানবজাতি। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কাছে মানুষ অসহায় আত্মসমর্পণ করছে। এই অসহায়ত্ব আপনাকে উদ্বিগ্ন করতে পারে-যা থেকে মুক্তির জন্য আপনি টিস্যু পেপার, মাস্ক, চাল-ডাল, তেল ইত্যাদি মজুদ করা শুরু করেছেন। এই সামগ্রীগুলোর কোনোটিই সেভাবে আপনাকে শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর থাকতে সহায়তা করবে কিনা আমি সন্দিহান।
এসবের সঙ্গে আপনার নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে আপনি কী করতে পারেন সে সম্পর্কে কিছু ভেবেছেন? কেন নয়? অন্য কাউকে আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য দায়বদ্ধ করার চেষ্টা করা মানুষের স্বভাব। তবে শেষ পর্যন্ত আপনিই একমাত্র নিজেকে সুস্থ বা অসুস্থ করে তুলতে পারেন। আপনার নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য এখানে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায়গুলোর একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
নিয়মিত পরিমিত ব্যায়াম: পরিমিত ব্যায়াম আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে। নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়াম প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি অ্যান্টিবডি এবং শ্বেত রক্ত কণিকাকে আরও দ্রুত সঞ্চালনে সহায়তা করে। ব্যায়াম স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ব্যায়ামের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অস্থায়ী তাপমাত্রার বৃদ্ধি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে দুর্বল বা হত্যা করতে পারে।
করণীয় : প্রতিদিন বাসার মধ্যে অথবা ছাদে অন্তত ত্রিশ মিনিট হাঁটুন অথবা ব্যায়াম করুন। ভুল করেও বাইরে হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে যাবেন না। ইয়োগা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত ব্যায়াম আপনাকে দুর্বল করতে পারে।
খাবার: আপনার খাবারের গুণগতমান আপনার স্বাস্থ্যের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ধারণ করবে।
করণীয় : প্রতিদিন অতিরিক্ত ২ গ্লাস পানি পান করুন। প্রতিদিন সম্ভব হলে অতিরিক্ত একটি ফল এবং একটু শাকসবজি খান। ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করুন, সম্ভব হলে white grains (যেমন সাদা প্রসেস করা আটা) না খেয়ে যিড়ষব মৎধরহং (প্রসেসবিহীন আটা) খান। সব ধরনের মিষ্টিযুক্ত পানীয় বাদ দিন। এক মুষ্টি চিপসের বদলে এক মুষ্টি বাদাম খান।
পরিমিত ভিটামিন ডি নিশ্চিত করুন: ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা আপনার অভিযোজক প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করে ফেলে। এটি অটো ইমিউন সিস্টেমের অংশ, যা নিজস্ব ভ্যাকসিনেশনের পেছনে কাজ করে।
করণীয় : প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট শরীরে সূর্যের আলো লাগান। যারা চশমা পরেন, তারা মাঝে মাঝে চশমাটি খুলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্যের আলোর জন্য আপনার চোখকে উন্মুক্ত করে দিন। সম্ভব হলে মাছ, ডিম ও মাশরুম খান।
মেডিটেশন করুন: মেডিটেশন শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত। এটি প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
করণীয় : দিনে অন্তত ৫ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করুন। ১ ঘণ্টা পর্যন্ত দীর্ঘ করতে পারেন। নিঃশব্দে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বসে কিছু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত দিয়ে চর্চা করতে পারেন। ধর্মীয়ভাবে মুসলমানদের জিকির, দোয়া-দরুদ পাঠ, তসবিহ পাঠ এবং অন্য ধর্মীয়দের জন্য ধ্যান মেডিটেশন হতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমান: সর্বোত্তম স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। ঘুমের সময় আপনার দেহ সাইটোকাইনস তৈরি করে। সাইটোকাইনস এমন প্রোটিন, যা সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে।
অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন: অ্যালকোহল পান করার ফলে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম এবং ইমিউন সিস্টেমের মাঝে যোগাযোগ ব্যাহত হয়। অ্যালকোহল অন্ত্রের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে। অ্যালকোহল এমনকি ফুসফুসের ইমিউন কোষগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস করে আর কোভিড-১৯ দ্বারা ফুসফুসের কোষগুলো সর্বাধিক আক্রান্ত হয়।
ধূমপান বন্ধ করুন: সিগারেটের ধোঁয়া ধূমপায়ীদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাটিকে দুর্বল করে তোলে। আমাদের শরীরের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলোর (যেমন ভিটামিন সি) ওপর ধূমপানের প্রভাব আছে, যা শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যে কোনো ধরনের ধূমপান আমাদের শ্বাসনালির টিস্যুগুলোর জন্য সরাসরি ক্ষতিকর। আতঙ্কিত হবেন না, সুস্থ থাকুন
আমরা সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করেছি আর সুস্থতাই কাম্য। আপনি যখন অস্বাস্থ্যকর জীবনের অভ্যাসগুলোকে বাদ দেবেন, আমি প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি আপনি আরও দৃঢ় ও শক্তিশালীভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে পারবেন।
( বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসির গাইডলাইন এবং বিদেশি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের প্রকাশিত আর্টিকেল অবলম্বনে)
লেখক: ড. মো. জুলফিকার মাহমুদ
সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা