করোনাভাইরাস ও নিরাপদ থাকতে আমাদের করণীয়

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ১১:৩৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৬ বার।

করোনাভাইরাস কী?  খবর যুগান্তর অনলাইন।

করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনও মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটিও এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতোমধ্যেই ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ

নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। যার ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

উৎপত্তি যেভাবে?

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে।

করোনাভাইরাসের লক্ষণ কী?

১, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

২, জ্বর

৩, কাশি

৪, গলাব্যথা

৫, অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া

৬, নিউমোনিয়া

৭, শরীর ব্যাথা

৮, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি

বিজ্ঞানীদের মতে, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এর এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।

চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যখন জরুরি: এ অবস্থায় শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে এবং বিদেশ ফেরত কারো সংস্পর্শে এসে থাকলে সঙ্গে উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

করোনা ভাইরাসের বেশি ঝুঁকিতে কারা?

১. বয়স্ক ব্যক্তিরা।

২. যাদের বয়স ৫০ এর উপরে সঙ্গে এমন রোগ (হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট বা উচ্চ রক্তচাপ) রয়েছে।

৩. গর্ভধারিনী নারী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। পুরো পৃথিবীতে এ ভাইরাসে শিশুদের আক্রান্তের পরিমাণ হাতেগোনা তবে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে কমবয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।

কিভাবে ছড়ায়?

১, বাতাসের মাধ্যমে

২, সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসলে।

৩, আক্রান্ত ব্যক্তির দূষিত জিনিসপত্র স্পর্শ করলে।

করোনা ভাইরাসের সঙ্গে তাপমাত্রার কি কোন সম্পর্ক আছে?

এ নিয়ে বিশ্বের গবেষকগণ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এখনো নিশ্চিত করে বলা যাবেনা সম্পর্ক আছে কিনা। তবে এটি নিয়ে সবাই এরকম ৬০ ডিগ্রি সিলসিয়াসের বেশিতে এই ভাইরাস বাঁচতে পারে না।

ভাইরাসটি কোন জিনিসে কতক্ষণ বেঁচে থাকে?

করোনাভাইরাস কতক্ষণ জিনিসের উপরে বেঁচে থাকতে পারে তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। কিছু তথ্যে বলা হচ্ছে কয়েকঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে সেক্ষেত্রে মিথানল দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে।

চিকিৎসা কী?

ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোনও টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এমন কোনও চিকিৎসাও নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। তবে কিটের মাধ্যমে এই ভাইরাস শনাক্ত করে কয়েক প্রকার ওষুধের মাধ্যমে লক্ষণগুলোর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

নিরাপদ থাকতে যা করবেন

১. রক্ষার একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

২. বাসায় অবস্থান করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া। বাইরে গেলে যেকোন অপ্রজনীয় জায়গায় স্পর্শ এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করা। আর সম্ভব হলে দুই হাতে একবার ব্যবহার করা যায় এমন গ্লাভস ব্যবহার করা। সঙ্গে ভিড় এলাকাগুলো চলাচলের ক্ষেত্রে পরিহার করা।

৩. বার বার বিশ থেকে ত্রিশ সেকেন্ড ধরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করতে হবে। বিশেষ করে হাত অপরিস্কার হলে অথবা বাসার বাইরে থেকে বাসায় ফিরে। সুযোগ থাকলে মোবাইল বা ল্যাপটোপের মাউস, কিবোর্ড ব্যবহার করলে খাবার কিছু হাতে নেবার আগেও হাত ধোয়ার চেষ্টা করা।

৪, হাত দিয়ে নাক-মুখ, চোখ স্পর্শ না করা।

৫, আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। তবে এই মুহুর্তে কিছু গবেষণা বলছে অসুস্থ না হলেও কয়েকজন ব্যক্তির মাঝে অবস্থান করলে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

৬,মাংস, শাক-সব্জি, ফল-মুল খুব ভালভাবে পরিষ্কার করে রান্না করা। ডিমের ক্ষেত্রে ভাল হয় সিদ্ধ করে খেতে পারলে। ৭, গৃহপালিত ও অন্যন্য পশু থেকে দূরে থাকতে পারেন।

আরও কিছু পরামর্শ

১, এই অবস্থায় অনেকেই হয়তো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থতায় হঠাৎ রাজপথে পড়ে যেতে পারেন এক্ষেত্রে নিজে কাছে না গিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে ফোন করুন।

২, আপনি বাসার বাইরে গিয়ে থাকলে এবং আপনার মাঝে এই লক্ষণগুলো যেমন সর্দি, কাশি,জ্বর, গলাব্যথা দেখা দিলে পরিবারের অন্যদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন তা না থাকলে কনুই দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন।

৩, আপনি বিদেশ ফেরত হলে নিজেকে ১৪দিন অন্যদের থেকে দূরত্বে রাখুন। হয়তো দেশে ফেরার সময় আপনি সুস্থ তবে ক্যারিয়ার হতে পারেন এবং এই ১৪দিনে লক্ষণ দেখা দিতে পারে অথবা নাও দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকুন।

৪, বিশেষ করে যাত্রাপথে ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এবং দোকান থেকে কিছু কিনে আমরা যে টাকা আদান প্রদান করি সেক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া এবং হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা।

৫, বিভিন্ন অফিস বা বাসার দরজায় হাতল বা গেট খোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই হাতে গোলভস ব্যবহার করা। লিফটের সুইচে হাত দেবার ক্ষেত্রেও গ্লভস ব্যবহার করা।

৬, মোসাহাফা বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা।

৭, যেখানে-সেখানে থুথু না ফেলা। মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করে যেকোন স্থানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।