করোনা মোকাবিলায় কেরালা যেভাবে সফল

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৪৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৭৯ বার।

করোনার মারণ থাবায় কাঁপছে বিশ্ব। ভয়ঙ্কর করোনার মারণ থাবায় কাঁপছে বিশ্ব। ভয়ঙ্কর ভাইরাসটি এ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। ভারতে করোনা প্রথম হানা দিয়েছিল কেরালা রাজ্যে। তবে সেই হিসেব চুকিয়ে দিয়েছে কমিউনিস্ট মাসিত রাজ্যটি। গত জানুয়ারির শেষদিকে কেরালায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। আর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এসে আগের সপ্তাহের তুলনায় রাজ্যটিতে করোনা আক্রান্তের হার কমেছে ৩০ ভাগ।

ভারতজুড়ে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেলেও কেরালায় মারা গেছে এ পর্যন্ত মাত্র ২ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৪ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ। এক্ষেত্রে বলা যায়, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কেরালা করোনার বিস্তার ও প্রতিরোধে সফল। 

করোনার বিরুদ্ধে কেরালার এই সাফল্যের নেপথ্যে কী কৌশল কাজ করেছে? -এর জবাবে রাজ্যের কল্যাণমন্ত্রী শৈলজা বলেন, 'আমরা নিখুঁত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম, পাশাপাশি সবচেয়ে খারাপের জন্যও প্রস্তুত ছিলাম। যদিও কেরালা থেকে এই মহামারি বিদায় নেয়নি, তবে উর্ধ্বরেখা অনেকটা নমনীয় এখন। যদিও আমরা আগামী সপ্তাহে কী ঘটতে চলেছে তা জানি না।'

করোনার বিরুদ্ধে কেরালার কৌশল সম্পর্কে ভাইরাস ও সংক্রমণজনিত রোগ বিশেষজ্ঞ ড. শাহিদ জামিল বলেন, একেবারে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে পরীক্ষা, আইসোলেশন, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা-এগুলোই হচ্ছে এ মহামারি রুখে দেওয়ার কার্যকরী পদ্ধতি। কেরালায় করোনা ঠেকানোর ক্ষেত্রে ‘প্রত্যেকেই কঠোর ও একইসঙ্গে মানবিক’ কৌশল নেওয়া হয়েছে। কঠোর লকডাউনের পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে দ্রুত গণপরীক্ষার ব্যবস্থা।

কমিউনিস্ট শাসিত রাজ্যটির কর্তৃপক্ষ জানায়, শুরু থেকেই তারা বিপুল পরিমাণে পরীক্ষা করে সাধারণ সুস্থ মানুষকে রোগীদের থেকে আলাদা করতে  পেরেছিল। সেজন্যই এই সংক্রমণের কিছুটা লাগাম টানতে পেরেছেন তারা। এ জন্য তারা করোনার বিস্তার  রোধে সফল দক্ষিণ কোরিয়াকে মডেল হিসেবে নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ধাঁচে কেরালার রাজ্য সরকার তৈরি করেছে অনেকগুলো ‘করোনা কিয়স্ক’। কাঁচের বানানো এ ঘরে করোনা সন্দেহভাজনদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ঘরগুলোতে আছে আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং পরীক্ষার ল্যাব। এই কিয়স্কগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়াক ইন স্যাম্পল কিয়স্ক’ বা উইস্ক।

কাঁচ দিয়ে ঘেরা কিয়স্কগুলিতে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের নমুনা সংগ্রহ করার একটি করে আলাদা স্থানও রয়েছে। করোনা আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহের সময় স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে সরাসরি সংস্পর্শে না আসেন, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে কিয়স্কে। লালার নমুনা সংগ্রহের পর স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতের দস্তানা কিয়স্কের বাইরে স্যানিটাইজ করিয়ে আনা হচ্ছে।

কেরালার উর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এস সুধাস জানান, এই পদ্ধতিতে গণ স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে করোনা আক্রান্তকে। তাকে আলাদা করে ফেলা যাবে সহসাই। এই ব্যবস্থার জেরে কমবে পিপিই কিটের চাহিদা। এভাবে অল্প সময়ই অনেক লোকজনকে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। আর এ জন্যই হয়তো ভারতের অন্য রাজ্য থেকে কেরালা সহজেই সাফল্য পেয়েছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।

সূত্র :  ওয়াশিংটন পোস্ট ও গ্লোবাল নিউজহাট।