করোনাকালের অর্থনীতি নিয়ে ভাবনা

কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ আর মজুরদের জন্য ৩ মাসের খাবার জরুরী

ডঃ মোহাঃ হাছানাত আলী
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ১৩:০৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৪৫ বার।

বিশ্বে মহামারী করোনায় ১লক্ষ ২৬ হাজারের বেশী মানুষ মারা গেছে।অাক্রান্ত ১৯ লাখ ৮১ হাজার।সূত্র: চ্যানেল ২৪ (১৫ এপ্রিল, ২০২০). মৃত্যর মিছিল দিন দিন লম্বা হচ্ছে।বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে করোন আক্রান্ত মানুষ ও মৃত্যুর সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশী।এখন পযর্ন্ত করোনা চিকিৎসায় বিশ্বের নামি-দামি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও ঔষুধ কোম্পানিগুলো আশাবাদী হবার মত কোনও সুসংবাদ দিতে পারছেন না। পৃথিবীর অনেক দেশ লকডাউনে স্হবির। বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্হা নিয়ে স্বস্তিতে থাকার মত কোন পরিস্হিতি এখন পযর্ন্ত দৃশ্যমান হয়নি। প্রথমবারের মত সিলেটের একজন তরুণ চিকিৎসক করোনায়  মারা গেছেন।তার চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যেই পরিবারের পক্ষ থেকে  প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাস্হ্য সেক্টরের দৈন্যদশা প্রকাশ পেয়ছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী (১৫ এপ্রিল পর্যন্ত) করোনায় ৫০জন মারা গেছেন আক্রান্ত হয়েছন ১ হাজার ২৩১জন। মৃত্য ও আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে সাধারণ ছুটি ও এলাকাভিত্তিক লকডাউন'র সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নাগরিকদেরকে নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। যদিও তা করতে  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে  এটাছাড়া বিকল্প আর কোন পথ রাষ্ট্রের হাতেও খোলা নেই।দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর বহুসংখ্যক শ্রমিক ও দিনমজুর উৎসবের  WHO'র প্রটোকল উপেক্ষা করে ঢাকা ছেড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো।যদিও ছুটি ঘোষণার মুল উদ্যেশ্যটা ছিলো মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখা।কিন্ত কাজ হলো ঠিক তার উল্টো।সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা গেল না সমন্বয়হীনতার কারণে। সামাজিক সক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে গেল। যেটি ধীরে ধীরে ব্যাপক আকার ধারণ করছে। নতুন করে মানুষ আকক্রান্ত হচ্ছে, আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। নতুন নতুন এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে।এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর ইনকাম প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম।সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা চলমান, তবে তা অনেকাংশেই প্রয়োজনের তুলনায় কম।লকডাউনের কারণে রাস্তায় রিক্সা-ভ্যান ও ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চলাচল প্রায় বন্ধ।এমতাবস্হায় তাদের আয় কমেছে। কিন্তু পারিবারিক ব্যয় একই থাকায় সামাজিক অস্হিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এরমধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে বসেছে ত্রাণের চাল চুরির ঘটনা। যাতে  সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলো তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

রমযান মাস আসছে। মুসলমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উদযাপন।কল কারখানায় কাজ নেই। হাট-বাজার বিপণিবিতানগুলো বন্ধ। ক্ষুদ্র আয়ের মানুষগুলো পড়তে যাচ্ছে এক দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চিত আর্থিক সংকটে।কবে দেশ স্বাভাবিক হবে। কল কারখানায় উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে, পথ-ঘাটে মানুষের চলাচল আগের মত স্বাভাবিক হবে তা এই মুহুর্তে কারো জানা নেই।কিছুদিন পরেই বোরো ধান কাটা শুরু হবে। প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। রাস্তা-ঘাট বন্ধ, এক জায়গা থেকে  আরেক জায়গায় যাতায়াত সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ।হাওড় অঞ্চলে সময়মত কৃষি শ্রমিক পাওয়া না গেলে কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।বিষয়টি নিয়ে সরকারের কৃষি বিভাগকে এখনই ভেবে দেখতে হবে।তাছাড়া এক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকেও তাদের কর্মপন্থা এখনই নির্ধারণ করে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে।অন্যথায় গ্রাম্য কৃষি অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

করোনা ইতোমধ্যেই আমাদের গার্মেন্ট, পযর্টন ও পরিবহণ খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।বিমান চলাচল হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে।পর্যটন, পরিবহন ও গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকরা ব্যাপকহারে চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। শ্রমিক শ্রণির ইনকামের উপর গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান অনেকাংশেই নির্ভর করে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ রিকশা চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু লকডাউনের কারণে শহর ফাঁকা। তাদের আয় বন্ধ। গ্রামে গিয়ে তারাও এখন আর্থিক সংকটে পড়েছে। দেশের বহু সংখ্যক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে।তারাও ঘরবন্দী। রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ।গ্রামের অনেক পরিবারই রেমিটেন্সের টাকার উপর নির্ভরশীল।সুতরাং এই মুহুর্তে গ্রামীণ অর্থনীতি ব্যাপক হুমকির মধ্যে পড়েছে। কৃষিকে যে কোন মুল্যে বাচাঁতে হবে।বিনা সুদে প্রকৃত কৃষকের মধ্যে কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা আশু প্রয়োজন। আগামী তিন মাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিনামুল্যে খাদ্য সরবরাহ করা এখন সময়ের দাবী।তবে তা অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যদের মাধ্যমে করতে হবে। যেকোন মুল্যে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও শস্যের বিপণন ব্যবস্থা সচল রাখা খুবই জরুরী। তাই এখনই গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে স্বাভাবিক রাখার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে-এটা সময়ের দাবী।মনে রাখেতে হবে কৃষক বাচঁলে দেশ বাচঁবে আর শ্রমিক বাচঁলে শিল্প বাচঁব

লেখক: প্রফেসর, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]