করোনাভাইরাস: রেমডেসিভির আসলে কী?

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২০ ১১:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৬ বার।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে হঠাৎই ফেভিপিরাভির বা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ছেড়ে রেমডেসিভির নিয়ে বেশ আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) করোনা চিকিৎসায় ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির অনুমোদন দেয়ার পরই এ আলোচনার শুরু।

এখন প্রশ্ন হলো– রেমডেসিভির আসলে কী? এই ওষুধ দিয়ে কি করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।

রেমডেসিভির একটি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ। ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি কমায় এ ওষুধ। এটি একমাত্র আমেরিকার জিলিয়াড বায়োটেকনোলজি কোম্পানি তৈরি করে। বিশ্বের আর কেউ এটি তৈরি করতে পারবে না আগামী কয়েক বছর পর্যন্ত।

রেমডেসিভির কীভাবে কাজ করে?

রেমডেসিভির প্রধান কাজ হলো– মানব কোষে ঢোকার পর ভাইরাস যে বংশবৃদ্ধি করে তা বন্ধ করে দেয়া ও বংশবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয়া।

করোনাভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে ভাইরাল আরএনএ ডিপেনডেন্ট আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম প্রয়োজন। রেমডেসিভির এই এনজাইমকে ব্লক করে। ফলে ভাইরাসের বিস্তার কম হয়। বংশবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় আক্রান্ত রোগীর দেহে ভাইরাস লোড অনেক কমে যায়। ফলে তাদের হাসপাতালে অপেক্ষাকৃত কম দিন অবস্থান করতে হয়। মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসে।

করোনাভাইরাস আমাদের ফুসফুসের কোষে ঢোকার পর কোষের বংশবৃদ্ধির উপাদানগুলো ছিনতাই করে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। একটা ভাইরাস মুহূর্তেই লাখো ভাইরাসের জন্ম দেয়। একসময় এই ছোট ছোট ভাইরাস কোষকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে বের হয় এবং পাশের নতুন একটি কোষকে আক্রমণ করে এবং আবার বংশবৃদ্ধি করতে থাকে।

এভাবেই করোনাভাইরাস আমাদের ফুসফুসকে ধ্বংস করে মাত্র কয়েক দিনে। আর তাই রোগী শ্বাস নিতে পারেন না।

রেমডেসিভির প্রয়োগে কি হয়?

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণে রোগীকে রেমডেসিভির দিয়ে চিকিৎসা করালে তারা সুস্থ হন ১০ দিনে, আর অন্যরা যারা রেমডেসিভির দেয়া হয় না, তারা সুস্থ হন ১৪ দিনে।

রেমডেসিভির কি কোভিড-১৯ রোগের জন্য তৈরি?

এই ওষুধ করোনা রোগীর জন্য তৈরি নয়। রেমডেসিভির নতুন কোনো ওষুধ নয়। এটি অন্যান্য ভাইরাল ইনফেকশনে আগেও রোগীদের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছিল। যেমন সার্স, মার্স, ইবোলা– এমনকি এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে এই রেমডেসিভির ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে।

মূলত ইবোলা ও মার্সের চিকিৎসায় এই রেমডেসিভির ব্যবহারে যে উপকার হয়, সেই অভিজ্ঞতা বা থিওরির ওপর ভিত্তি করেই ‘সার্স করোনাভাইরাস-২’ বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর ওপর এর প্রয়োগ শুরু করা হয়।

রেমডেসিভির কীভাবে শরীরে প্রয়োগ করা হয়?

সাধারণত রেমডেসিভির ইনজেকশন কোভিড-১৯ রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়। ১০ দিনের কোর্স। প্রথম দিন ২০০ মিগ্রা ইনজেকশন পরবর্তী ৯ দিন ১০০ মিগ্রা।

রেমডেসিভিরের দাম কত?

আমেরিকার জিলিয়াড বায়োটেক কোম্পানি এটি এখনও বাজারে বিক্রি করেনি। ট্রায়াল হিসেবে রোগীদের ফ্রি দিচ্ছে।

তবে উৎপাদন, কাঁচামাল– এসব হিসাব করলে মোটামুটি বলা যায়, কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ১০ দিনের এক কোর্স রেমডেসিভির ইনজেকশনে খরচ হবে ন্যূনতম এক হাজার ডলার বা প্রায় ৯০ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো আছেই।

কোভিড-১৯ রোগীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় কার্যকর ওষুধ হলো– অক্সিজেন। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ফেভিপিরাভির, রেমডেসিভির, ফ্লোরোকুইন, এজিথ্রোমাইসিন- এসব যাই বলেন, সবার আগে রোগীর জন্য চাই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন।

ডা. সাঈদ এনাম, সহকারী অধ্যাপক, সিলেট মেডিকেল কলেজ।