কেন্দ্রীয় মসজিদের খুৎবা: মিথ্যা বললে, গীবত করলে রোজা হবে না শুধু সামাজিকতাই পালন হবে

আমিনুর রহমান:
প্রকাশ: ০১ জুন ২০১৮ ১২:৪৪ ।
আলোচনা
পঠিত হয়েছে ১২২১ বার।

১ জুন, ২০১৮, পনের রমজান। শুক্রবার।
আজ বগুড়া কেন্দ্রীয় বড় মসজিদে বাংলা খুৎবায় পবিত্র কোরআন শরীফের ২৫ নম্বর সূরা ফুরকানের ৬৮ আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ ৭৭ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করা হয়। ওই মসজিদের খতিব মাওলানা আজগর আলী আয়াতগুলো পাঠ করেন। আসুন নিচে আলোচিত ওই দশটি আয়াতের বঙ্গানুবাদ প্রথমে জেনে নিই।
সূরা ফুরকানের ৬৮ আয়াত থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতের অর্থঃ [৬৮] এবং তারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদকে ডাকে না এবং যাকে আল্লাহ্ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, ন্যায় সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না। তারা ব্যভিচার করে না। যে এ কাজগুলো করে সে শাস্তির সম্মুখিন হবে। [৬৯] কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সে লাঞ্ছনা অবমাননার সাথে সেখানে সর্বদা থাকবে। [৭০] কিন্তু তাদের ব্যতীত, যারা তওবা করে এবং ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, এসব ব্যক্তিদের গুণাহসমূহ আল্লাহ্ নেক দ্বারা বদলিয়ে দিবেন। আল্লাহ্ পাপ মার্জনাকারী এবং  পরম দয়ালু। [৭১] যে ব্যক্তি তওবা করে এবং নেক কাজ করে সে তো আল্লাহ্ দিকেই সত্যিকারভাবে প্রত্যাবর্তন করে। [৭২] এবং যারা মিথ্যা কথায় সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন অনর্থক কার্যকলাপের সম্মুখিন হয় তখন মর্যাদা রক্ষার্থে (তা এড়িয়ে) চলে। [৭৩] এবং যখন তাদেরকে প্রতিপালকের আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দেওয়া হয়, তখন তারা তার উপর অন্ধ ও বধিরের মত হয় না। [৭৪] এবং তারা এ বলে যে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আমাদের স্ত্রী এবং সন্তানদের থেকে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে পরহেজগারদের পথ প্রদর্শক বানিয়ে দিন। [৭৫] তাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে জান্নাতের কক্ষ, এজন্য যে, তারা ধৈর্য্য ধারণ করেছে, সেখানে তারা অভিভাদন ও সালাম পাবে। [৭৬] সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে, সেটা খুবই উৎকৃষ্ট স্থান। [৭৭] বলুন, যদি তোমরা আমার প্রতিপালককে না ডাক, তবে আমার প্রতিপালক মোটেও এর পরোয়া করেন না। তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ, অচিরেই তার প্রতিফল অবশ্যম্ভাবী।
মাওলানা আজগর আলী বলেন, রমজান মানুষকে মৃদুভাষী করার প্রশিক্ষণ দেয়। পরিমিত খাবারের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু মিথ্যা বলার অভ্যাস অনেকেই ছাড়তে পারছেন না। তাদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, হাদীস শরীফে আসছে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যিনি রোজা থাকলেন, তার পেটটা কষ্ট পাচ্ছে, শরীরটা কষ্ট পাচ্ছে অথচ মিথ্যা ছাড়তে পারলো না। গীবত ছাড়তে পারলো না। চোগলখুরী ছাড়তে পারলো না। হিংসা ছাড়তে পারলো না। পরনিন্দা ছাড়তে পারলো না। পরের ভালো দেখলে মনটা জ্বলে-এটাও গেল না। এই রকমের ক্ষুধা সর্বস্ব পেট খালি করা রোজা আল্লাহর কাছে কোন প্রয়োজনই নেই। এগুলো যদি কেউ না ছাড়তে পারেন তাহলে তার রোজা হবে ‘সামাজিকতার রোজা’। মানুষের কাছে হয়তো রোজাদার হিসেবে পরিচয় দেওয়া যাবে। কিন্তু যেই রোজা কেয়ামতের ময়দানে আপনাকে সুপারিশ করে আপনাকে জান্নাতে না পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না, সেই রোজা আর হলো না। একবার ভাবুন তো! রোজাদার প্রমাণের জন্য ক্ষুধা সহ্য করলেন, তৃষ্ণা সহ্য করলেন। তারাবীর নামাজ আদায় করলেন কিন্তু মিথ্যা ছাড়তে পারলেন না- তাহলে এত কষ্ট করেও কোন লাভ হবে না।
মাওলানা আজগর আলী  সূরা ফুরকানের শেষের আয়াতগুলোর কথা উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেছেন যে ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে না-এমন আলম যে ব্যক্তি করে যেতে পারবে কেয়ামতের ময়দানে তাকে সম্মানিত করা হবে। এমন সুউচ্চ জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে যেই জান্নাতের বাহির থেকে ভিতর, ভিতর থেকে বাহির স্বচ্ছ কাঁচের মত বস্তু দিয়ে ঘেরা থাকবে।

বাংলা খুৎবায় মাওলানা আজগর আলী বলেন, সকল পাপের মুল হলো ‘মিথ্যা’। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলতে পারে তার দ্বারা সবকিছু করা সম্ভব। মিথ্যার গুনাহ্ মারাত্মক। বলা হয় না যে কাফের কিন্তু বাকি থাকে না। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি আল্লাহ্্কে হাজির-নাজির জেনে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন দিলে তার ঈমান থাকে না।মাওলানা  আজগর আলী হাদীসের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ্ রাসুল (সাঃ) বলেছেন রমজান মাস হলো শাহরুস সবর বা ধৈর্য্যরে মাস। রমজান মাস হলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাস। রমজান মাস হলো পারস্পরিক খাদ্য দান করার মাস। অভাবীদের খোঁজ খবর নেওয়ার মাস। এতিম মিসকিনদের দান করার মাস।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটা কাজে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ধৈর্য্য মানে কিন্তু পিঠ পেতে মেনে নেওয়া নয় বরং ধীর স্থিরভাবে ঈমানের ওপর মজবুত থেকে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার নামই হলো ধৈর্য্য। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ যদি ধৈর্য্য ধরে মনে মনে বলে যে রোজা আছি আমার এখন গুণাহ করা যাবে না। এইভাবে ধৈর্য্য ধরতে ধরতে একটা, দুইটা, তিনটা, চারটা, পাঁচটা-দশটা রোজা করতে থাকেন তাহলে আল্লাহ্ রহম দিবেন। ধৈর্য্যরে মধ্যে তাকে মজবুত রাখবেন। রাব্বুল আলামীন ধৈর্য্য ধারণকারী ব্যক্তির রূহানী শক্তি বাড়িয়ে দিবেন তখন গুনাহ্ শক্তিটা কমে যাবে। এইভাবে আস্তে আস্তে পুরো রমজান মাস যদি সে সাধনা করে চর্চা করে তাহলে তিনি পাক্কা একজন মোত্তাকি ঈমানদার হয়ে যাবে। আল্লাহর  রাসুল (সাঃ) বলেছেন ধৈর্য্যরে প্রতিদান হলো জান্নাত। কেউ যদি ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে তাহলে তার প্রতিদানে আল্লাহ তাকে জান্নাত দিয়ে দিবেন।সবশেষে তিনি প্রত্যেক মুসল্লীকে রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ পালনের আহবান জানান।