করোনা শনাক্তে আলো জ্বলার মাস্ক আনছে এমআইটি-হার্ভার্ড

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২০ ১২:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৭ বার।

ফেস মাস্কে নভেল করোনাভাইরাসের জীবাণু পড়লে আলোর সংকেত পাওয়ার প্রযুক্তি তৈরি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।

বিজনেস ইনসাইডার জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার আগে অন্য ভাইরাস শনাক্তের জন্য ২০১৬ সালে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে সফল হন এমআইটির বায়োঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাগারের গবেষক জিম কলিন্স। ওই সময় তিনি এই প্রযুক্তিতে জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এখন করোনার পেছনে ছুটছেন।

যেভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি: মাস্ক পরা অবস্থায় কোনো ব্যক্তির নিশ্বাসে করোনা আসলে আলোর সংকেত ধরা পড়বে।

এই প্রযুক্তিতে চিকিৎসকেরা জায়গায় দাঁড়িয়ে মানুষের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে পারবেন। লালায় জীবাণুটি আছে কি না, সেটি বোঝা যাবে।

কলিন্স জানিয়েছেন, তার প্রজেক্ট প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও পরীক্ষায় ভালো ফল পাওয়া গেছে। পুরোপুরি তৈরি হতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।

এই মাস্কে একটি সেন্সর বসানো হয়েছে। যেটি অল্প লালা থেকে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে সক্ষম। ওই সেন্সরটি মাস্কের ভেতরের দিকে বসানো হবে না কি মাস্কের বাইরে সংযুক্ত করা যাবে, সেটি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।

এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আগে সার্স, হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং হেপাটাইটিস সি শনাক্ত করেছেন। 

‘কম খরচে কাগজে আগে আমরা এভাবে ভাইরাস শনাক্ত করেছি,’ জানিয়ে কলিন্স বলেন, ‘এটি প্লাস্টিক কিংবা পোশাকেও সম্ভব।’

করোনা শনাক্তের সেন্সর: কলিন্সের এই নতুন সেন্সর ডিএনএ এবং আরএনএ জিনগত উপাদান দিয়ে তৈরি। উপাদানগুলো ফ্যাব্রিকের ওপর রেখে হিমায়িত করে লাইওফিলাইজার নামের একটি মেশিনের সাহায্যে হিমায়িত করা হয়, যা জেনেটিক উপাদানকে নষ্ট না করে তরল অংশটুকু চুষে নেয়। এটি সাধারণ তাপমাত্রায় মাস্কের ভেতর কয়েক মাস ভালো থাকে।

সেন্সর চালু হতে দুটি জিনিস লাগবে। প্রথমত তরল পদার্থ, যেটি শ্বাস প্রশ্বাসের কণা যেমন লালা থেকে পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ধাপে তাদের ভাইরাসের জেনেটিক সিকোয়েন্স বা জিনগত নকশা শনাক্তের প্রয়োজন হবে।

সাংহাইয়ের একটি ল্যাবরেটরি গত জানুয়ারিতে করোনার জিনোম সিকোয়েন্স উদঘাটন করে। বাংলাদেশের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরাও এটি উদঘটান করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

জিনোম হলো জীবের জিনগত বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। বংশগতির সব বৈশিষ্ট্যই এক বা একাধিক জিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব বৈশিষ্ট্যের তথ্য জানার প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো জিন-নকশা উন্মোচন। এ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কৌশল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

কলিন্স জানিয়েছেন, তার সেন্সরে ভাইরাসের জিনগত নকশার ছোট একটু অংশ শনাক্ত হলেই চলবে। শনাক্তের পর এক অথবা তিন ঘণ্টার ভেতর আলোর সংকেত পাওয়া যাবে।

এই সংকেত খালি চোখে অবশ্য দেখা যাবে না। ফ্লুরোটিমার নামের একটি মেশিন দরকার হবে। কলিন্স জানিয়েছেন, মাত্র এক ডলার মূল্যের এই মেশিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

কলিন্স এবং তার সহকর্মীরা ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে যে সেন্সর তৈরি করেন, সেটির দাম ছিল ২০ ডলারের মতো।