দুহাজার কর্মহীনদের মাসব্যাপী ইফতার দিচ্ছেন বিএনপি’র এই নবীন নেতা

জাকির আরেফিন
প্রকাশ: ২২ মে ২০২০ ১০:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯০ বার।

নন্দীগ্রামের চাকলমা বাজারের উত্তরপাশে শহিদুল ইসলামের পুরাতন ছ’মিল। রমজানের শুরু থেকেই ছ’মিল চত্বরে চলছে অন্যরকম এক আয়োজন। প্রতিদিন রান্না হচ্ছে ৮ থেকে ১০ সসপেন খিচুড়ি। দুপুরের পর থেকেই প্রস্তুত থাকে ভ্যান ও মোটরসাইকেল। সেইসাথে প্রস্তুত ১ থেকে দেড়শ জনের স্বেচ্ছাসেবক দল। রান্না শেষে খিচুড়ি পলিথিনে ভরা মাত্রই শুরু হয় তাদের আসল ব্যস্ততা। ইফতারের আগেই খাবারগুলো পৌঁছানো চাই নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অসহায়, কর্মহীন ও দুস্থ মানুষদের হাতে। উদ্দেশ্য একটাই, কেউ যেন অভুক্ত না থাকে।
এই সংকটমুহুর্তে এমন একটি মহতী আয়োজনের যে রূপকার, সে বগুড়ার সাবেক যুবদল নেতা এবং নন্দীগ্রামের চাকলমা গ্রামের কৃতী সন্তান আব্দুর রাজ্জাক সুমন।
সুমনের বাবা মরহুম এম. এ খালেকও ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও চাকলমা হাই স্কুল, কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, কেন্দ্রিয় ঈদ গাহ ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা’র সভাপতি। তাই পারিবারিকভাবেই সুমন পেয়েছে মানুষকে সহযোগিতা করার এবং মানুষের পাশে থাকার সহজাত প্রবৃত্তি। সুমন জানান, বাবার অবর্তমানে তিনিই প্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।  
নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী জানান, সুমনদের পরিবার এলাকায় বহু আগে থেকেই জনসেবার জন্য পরিচিত। এর আগেও নানা দুর্যোগ-দু:সময়ে এই পরিবার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এইবার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সুমন।
চাকলমা গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুর রহমান জানান, “সুমন প্রতি বছরই গ্রামবাসীদের ইফতার করান। এবার নাকি পুরো মাসই ইফতার দিবে।”
সুমন জানান, “এই সংকটকালে চারিদিকে ক্ষুধার্ত মানুষদের আর্তনাদ ও আহাজারী। এই কারনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুরো মাসই কর্মহীন মানুষদের ইফতার দিবো। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস, পরীক্ষা ফি, বেতনের টাকা দিয়েও সহযোগিতা করে থাকি। এইবার যেমন ৭২ জন বাচ্চাকে ড্রেস দিতে হবে .. ..।”
খাবার বিতরণ কাজে জড়িত স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, সাবেক যুবদল নেতা সুমনের আর্থিক সহযোগিতায় এবং তার নির্দেশে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষের হাতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। কিছু এলাকায় তারা সরাসরি খাবার বিতরণ করেন। আবার কিছু এলাকা থেকে প্রতিনিধিরা এসে খাবার নিয়ে যায়।  
তারা আরও জানান, খাবার পৌঁছানোর আগে থেকেই ওই স্থানগুলোতে কর্মহীন ও ক্ষুধার্ত মানুষেরা অপেক্ষা করতে থাকে, অনেকেই খাবার পেয়ে কেঁদেও ফেলে। এ কাজকে তারা ইবাদতের অংশই মনে করেন। তাই অন্যরকম এক পরিতৃপ্তি পান তারা।
খাবার বিতরণের পয়েন্টগুলো হলো-পন্ডিতপুকুর, মারিয়া, তিতলা, আঁচড়া, পৌর এলাকা, চাকলমা, ভাটগ্রাম, কালিশা, মালচাপড়া ও কাহালু উপজেলার কিছু এলাকা।
সুমন
আরও জানান, খাবার প্রদানের পাশাপাশি করোনাসংকটকালে তিনি এলাকার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রীও প্রদান করেছেন।
তিনি নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করেছেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সকল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্যও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করেছেন।  
এছাড়াও জাতীয়বাদী চিকিৎসক পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট চিকিৎসকদের জন্য পিপিই এবং ফেস শিল্ডসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রী প্রদান করেছেন বলে তিনি জানান।
বগুড়ার শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্যও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করেছেন নবীন এই নেতা।
এছাড়াও
তার পক্ষ থেকে ঢাকাতেও শতাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই ও ফেস শিল্ড প্রদান করা হয়েছে।
এই করোনা সংকটকালে আব্দুর রাজ্জাক সুমন তার বগুড়ার দুটো বাড়ীর ভাড়াটিয়াদের ৩ মাসের ভাড়াও মওকুফ করেছেন বলে জানালেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সফল ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক সুমন নিজের প্রতিষ্ঠিত রেইনবো এডভার্টাইজিং-এর সিইও এবং ইম্পেরিয়াল গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। টঙ্গীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের মালিকপক্ষের সেও একজন।
পরিশেষে তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলকেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।