৭১' এর ছবি [প্রথম পর্ব]

সাজিয়া আফরিন সোমা
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:০৭ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৫১৯ বার।

মাঝ রাতে পাশাপাশি ওরা হেঁটে চলেছে বহুক্ষন , কেউ কথা বলেছে না। ছবি নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে কথা শুরু করে-

 

ছবি : তুমি কেনো ডেকেছো বললে না তো?

নাহিল : মনে মনে বলে, বলতে চেয়েছিলাম তো অনেক কিছু কিন্তু তোর ঐ জোছনা ধোয়া মুখ আমাকে নির্বাক করে দিয়েছে। শুধু চেয়ে থাকতে মন চাইছে অনন্তকাল!

 

ছবি : কি হলো হাঁটবার জন্যই কি ডেকেছো?

 

নাহিল : ভেবেছিলাম হাঁটবো কিন্তু তোর এতো প্রশ্নে আর সে ইচ্ছা টাও নাই। এতো বেশী অস্থির আর এতো কথা বলিস তুই !

 

ছবি : তুমি কেমন মানুষ বলো তো?

নাহিল : বাজে মানুষ।

ছবি : দূর। এতক্ষনে আমার দুই তিনটা ঘুমস্বপ্ন দেখা হয়ে যেতো।

নাহিল: ঘুমস্বপ্ন? বা ভাল নাম তো!

ছবি : তুমি আগেও একবার ছাদে ডেকে ভোর রাত পর্যন্ত আমাকে বসিয়ে রেখে কি সব খেই ছাড়া গল্প জুড়িয়েছিলে আর সকালে দেখলাম আমার চোখের নিচে কালি।

নাহিল: তুই নিজেকে খুব সুন্দরী ভাবিস তাইনা?

ছবি : ভাবি তো! তোমার কি কোন সমস্যা?

নাহিল: না! আমার কি সমস্যা? তবে শাঁকচুন্নি যে আয়নায় নিজেকে দেখতে পায় সেটা এই প্রথম জানলাম!

ছবি : ভাইয়া তোমার কি হাঁটা শেষ? না হলে তুমি থাকো আমার হাঁটার কোন ইচ্ছা নাই। শাঁকচুন্নির সাথে হাঁটছো তোমার তো ভয় পাওয়ার কথা? আর আমার মনে হয় তুমি কিছু নিয়ে ভাবছো। তো ভাবো। কাল ভাবনার ফলাফল প্রকাশ করো,ফুপু তোমাকে নিয়ে যথেষ্ট ভানায় আছে।

নাহিল : একটু হাঁটা হাঁটি কর,না হলে তো এই বয়সেই বস্তা হয়ে যাবি,তখন পাত্র পাবি না শেষে আবার আমার ঘাড়ে এসে জুটবি।

ছবি : তোমার মতো খেই হারা মানুষের ঘাড়ে পরার চেয়ে পানিতে পরা ভাল। আমি চললাম।

নাহিল: ছবির চলে যাওয়া দেখছে, ইচ্ছে করছে বলতে,তুই এমন অস্থিরতা নিয়ে কেনো থাকিস? একটু ও ধীর স্থির ভাবে কিছু ভাবতে পারিস না? কেনো দেখতে পাস না যে তোর চারপাশটা জুড়ে শুধুই আমি? কেনো এখনও ঘোর কেটে বেরুতে পারিস না!?

ছবি ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পেলো,নাহিল তখনও হাঁটছে আনমনে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে ছবি। ভীষন শান্ত সভাবের অসাধারন একটা মানুষটা নাহিল,যার পাশে সারাজীবন চোখ বন্ধ করে কাটানো যায়। না,এবার ঘুমিয়ে পরতে হবে,স্বপ্ন দেখার সুযোগ তার নেই,ভাবে ছবি।

ছবি আজ বেশ সকাল সকাল উঠেছে। ফুপুকে কাজ এগিয়ে দিয়ে সে বের হবে। তাই তাড়াহুড়ো করছে। নাহিল উঠে পরেছে আজ সকালেই।

নাহিলঃ কি রে চা দিবি,নাকি বাইরে গিয়ে খেতে হবে?

ছবিঃ আজ এতো সকালে উঠেছো হঠাৎ!

নাহিলঃ উঠলেও তুই বিরক্ত, না উঠলেও,ঘটনা কি বলতো? তুই কি আমাকে দেখতে পারিস না,নাকি?

ছবিঃ দেখতে পারবো না কেনো? তুমি তো সারাদিন চোখের সামনেই থাকো। তোমার বউ এলে দেখো কেমন বিরক্ত হয়।

নাহিলঃ দে,এবার চা খেয়ে বের হবো।

ছবিঃ কেনো এতো তাড়া শুনি?

নাহিলঃ তোর এতো মাথা ব্যথা কেনো? যেখানে খুশি যাই না কেনো।

ছবিঃ মৌমিতা ফোন করেছিলো সকালে তোমার খোঁজে,তাই ভাবলাম তেমাকে সকাল সকাল যেতে বলেছে হয়ত।

নাহিলঃ ওর আবার কি হলো? আচ্ছা? তোর বন্ধু তুই তার সমস্যার সমাধান দিতে পারিস না? বড় ভাইকে সব কিছুতে ডাকিস লজ্জা করেনা?

ছবিঃ নাতো! তুমি তো বসেই থাকো সারা দিন।একটা কিছু অন্ততো করো। হলোই না হয় সেটা মৌমিতার জন্য কিছু।

নাহিলঃ আর তোর ঐ এক বন্ধু মৌমিতা,সে নিজেকে খুব সুন্দরী মনে করে,কিন্তু মাথায় সামান্যতম বুদ্ধি নাই।

ছবিঃ দেখো ভাইয়া সে ১০০ তে ১১০% সুন্দরী। আর তুমি কি করে বুঝলা ওর বুদ্ধি কম? তুমি ওকে পছন্দ করো না তাই বলো।

নাহিলঃ চা টা দে না,খেয়ে বিদায় হই। এসেছে এক গবেট আর এক গবেটের তারিফ করতে!! ছবি মুখটা হপ করে চা দিয়ে নিজের কাজে লেগে গেলো। আজ মৌমিতা কি যেনো বলবে ছবিকে খুব জরুরী তাই একটু আগে আগে বেরুবে ছবি। (চলবে)