আমেরিকা জুড়ে বিক্ষোভঃ রাস্তায় হাঁটু গেড়ে অবনত মস্তকে বসে জনগণের মন জয় করলো মিয়ামি পুলিশ

মোর্শেদ টিটো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২০ ০৬:২৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৯৫ বার।

মার্কিন মুলুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ দমাতে আমেরিকার রাজ্যগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন ব্যতিক্রমী উপায়ে জনগণের মন জয় করলো মিয়ামির পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস কিংবা বুলেট নিক্ষেপ না করে মিয়ামি পুলিশ রাস্তায় হাঁটু গেড়ে অবনত মস্তকে জনগণের সামনে বসে পড়েন। এর মাধ্যমে তারা যেন মেনিসোটা রাজ্য পুলিশের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতে মিয়ামির জনগণও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা পুলিশের এমন আচরণে ক্রোধভুলে রীতিমত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
পুলিশী নির্যাতনে জর্জ ফ্লোয়েড (৪৬) এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে আমেরিকার মেনিসোটা রাজ্য। ২৫ মে ওই ঘটনা ঘটলেও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদেরকে গ্রেফতার না করায় ৩০ মে’র পর থেকে অন্যান্য রাজ্যেও দাবানলের মত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। করোনার সংক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন। সব বয়সী আমেরিকান ওই বিক্ষোভে শামিল হন।
আমেরিকার মেনিসোটা রাজ্যের মিনিপোলিস সিটিতে ‘টার্গেট’ নামক একটি স্টোর থেকে চুরি করা হয়েছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৫ মে ওই স্টোরে বাজার করতে আসা জর্জ ফ্লোয়েড (৪৬) নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে পার্কিং লট থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশ মাটিতে শুয়ে হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে রাখে।  এক পর্যায় ফ্লোয়েডের মৃত্যু হয়। 
পুলিশের বর্বরোচিত এই আচরণে মেনিসোটা রাজ্যের জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ঘটনার পরপরই দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ জন পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করা হয় বলে পুলিশ প্রশাসন থেকে প্রেস কনফারেন্সে জানানো হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা শুধু চাকুরিচ্যুত নয় তাকে গ্রেফতার এবং আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। 
বিক্ষোভকারীরা গত ৩০ মে মেনিসোটা রাজ্যের পুলিশ স্টেশনসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বাড়ি এবং যে স্থানে জর্জ ফ্লোয়েডের ওপর নির্যাতন চালানো হয় ‘টার্গেট’ নামেই সেই স্টোরেও হামলা চালিয়েছে। প্রায় ৩ মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভকারীরা এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও বুলেট ছুঁড়তে শুরু করলে জনগণ আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা আরও মারমুখী হয়ে ওঠেন। অনেক ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমেরিকার অন্যান্য রাজ্যেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত করতে যে কোন লাঠিপেটা কিংবা সংঘর্ষের প্রয়োজন হয়না- তার বড় প্রমাণ মিয়ামি পুলিশের অভাবিত এই আচরণ। অনেক আমেরিকানের মতে মিয়ামি পুলিশের এই পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মানবিকতা ও সভ্যতার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।