৭১' এর ছবি [ দ্বিতীয় পর্ব ]
সাজিয়া আফরিন সোমা
মৌমিতা আজ খুব সেজেছে,দারুন দেখাচ্ছে ওকে। ছবিকে দেখেই এক লম্বা চিৎকার। ছবি কাছে আসতেই মৌমিতার প্রশ্ন নাহিল ভাই কি আসবে? চল আজ ক্লাশ করবো না,আড্ডা দেই।
ছবিঃ আমি তো আসতে বলিনি,কেনো ওকে কি দরকার বলতো?
মৌমিতাঃ কিছুনা,পরে বলবো সব।
ছবিঃ তো ভালো,আমি বাড়ি যাবো দুদিনের জন্য,আজ আর আড্ডাতে মন নাই আমার। তুই পারলে সব নোট নিয়ে রাখিস।
মৌমিতাঃ বাড়ি যাবি এখন? সামনে পরীক্ষা তো?
ছবিঃ বাড়ি থেকে চিঠি এসেছে,আব্বা যেতে বলেছে।
ছবি বাড়ি ফিরে কাপড় গোছাতে শুরু করেছে,আজই যাবে ভাবছে,অনেক দিন যাওয়া হয়নি বাড়ি,আর আব্বা লিখেছে পত্র পাওয়া মাত্র যেনো রওনা হই।
ফুপুঃ আজই ব্যাগ গোছাতে শুরু করেছিস কেনো?
ছবিঃ আজই যাই,কতদিন যাই নি। আর বার বার মা- আব্বা ডাকছে।
ফুপুঃ হু যা তাহলে,আমাকেও ভাবী চিঠিতে লিখেছে তোকে যেনো অবশ্ব্যই পাঠাই।
নাহিলঃ কোথায় পাঠাবে? ছবিঃ বাড়ি যাচ্ছি আজ। নাহিলঃ আজই! কেনো?
ছবিঃ ডেকেছে বাড়ি থেকে, নাহিলঃ চল আমি তুলে দেই
ছবিঃ লাগবেনা, তুমি তোমার ঘুম নিয়েই থাকো। আর এই ছোট একটা ব্যগের জন্য যেতে হবে না।
নাহিলঃ ছোট ব্যাগটাই তো দেখি ২ ঘন্টা ধরে গোছাচ্ছিস। কোন কথা না বলে ছবি বেরিয়ে পরে একা।
বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছে ছবি। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হবে হবে,চারপাশ সবুজ,বাড়ির সামনে পুরোনো পুকুর। দরজা পেরিয়ে ভিতরে যেতেই রিনির কিন কিন কন্ঠ কানে এলো। কতদিন পর দেখবে ওকে। রিনি বলে ডাকতেই ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে এলো ছোট্ট মেয়েটি।সবে পাঁচ বছর হলো। ছবি কোলে তুলে নিলো রিনিকে। নরম তুলতুলে হাতে ছবিকে জড়িয়ে ধরলো রিনি।
মাঃ কাল আসলেই পারতি,এমন করে অবেলায় না এসে ?
ছবিঃ মন মানলো না তাই আজই আসলাম। মাঃ মেয়েটা খুব খুশি হইচে তোকে দেখে।
ছবিঃ সে কারনেই তো আজ আসা,যেনো ওর সাথে আর একটু বেশী থাকতে পারি। মা র মুখটা এবার একটু মলিন দেখালো,ছবি কিছু না বলে মেয়েকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। মেয়েকে বলার জন্য অনেক গল্প জমিয়ে রেখেছে ছবি। ওকে আজ গল্প শুনাবে যত শুনতে চাইবে। রিনিকে ছাড়া ছবির দিন গুলিও যেনো মরুভূমি। রাতে সোবহান আলী খেতে বসেছে। ছবি মেয়েকে খাওয়াচ্ছে।
সোবহান আলীঃ মা ছবি তোমার পরীক্ষা কবে?
ছবিঃ দেরি আছে এখনও ডেট হয়নি।
সোবহান আলীঃ রহিম একটা কথা নিয়া আসছিলো সেই দিন,সব শুনে বুঝেই তোমারে ডাকা।
ছবিঃ কি বিষয়ে রহিম চাচা আসছিলো?
সোবহান আলীঃ তোমার বিষয়ে কথা বলতে। ওর এক ভাগিনা উকিল,বেশ নাম করা। আগামী শুক্রবার তোমাকে দেখতে আসবে।
ছবিঃ আবার এই সব শুরু করছেন আপনি? আমি বলছি আমার বিয়ে নিয়ে এখন ভাবার দরকার নাই। সবই তো জানেন। কেনো তাহলে বার বার এই ঝামেলা করেন?
সোবহান আলীঃ রিনি তো আমাদের কাছে যেমন আছে তেমনই থাকবে। কিন্তু তোমার কথা আমাকে খুব ভাবায়,মা।
ছবিঃ তার মানে রিনি আমার কাছে থাকবেনা? আমি রিনিকে কাছে রাখার জন্যই এতো কষ্ট করে পড়াশুনা করছি আব্বা,যেনো চাকুরী পেলে ওকে নিয়ে যেতে পারি।
সোবান আলীঃ আমি কথা দিয়েছি তাদের, একবার আসুক, তারপর না হয় এগুলা ভাবা যাবে। ছবি নীরবে মেয়েকে খাইয়ে ঘরে চলে আসে। মেয়েটাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। আর কারো মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করেনা তার। (চলবে…………)