নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর অনুসন্ধান

গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ব্যবসা করছে ফেসবুক

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৫ বার।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ব্যবসায়িক অংশীদার বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময় করে আসছে ফেসবুক। বিশ্বের জনপ্রিয়তম এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাবেক কর্মীদের সাক্ষাৎকার ও অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে,  মাইক্রোসফট, অ্যামাজান, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই, রয়েল ব্যাংক অব কানাডার মতো ব্যবসায়িক অংশীদার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এসব তথ্য বিনিময় করেছে ফেসবুক। নিউ ইয়র্ক টাইমস অভিযোগ তুলেছে, অংশীদারদের সঙ্গে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময়ে ফেসবুকের নিজস্ব গোপনীয়তা বিধি ক্ষুণ্ন হয়েছে। অভিযোগ নাকচ করে ফেসবুক বলছে, ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া কাউকে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে তারা স্বীকার করেছে, তাদের পুরনো সফটওয়্যার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সফটওয়্যার উন্নয়নকারীরা গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য পেয়ে থাকতে পারে।

২৭০ পৃষ্ঠার অভ্যন্তরীণ নথি বিশ্লেষণ করা ছাড়াও সাবেক ফেসবুক কর্মীসহ ৬০ জনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়েছে, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই, রয়েল ব্যাংক অব কানাডার মতো কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত মেসেজ পড়ার, লেখার ও ডিলিট করার অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। ২০১৭ সালের কিছু নথিকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই ভার্চুয়ালভাবে তাদের সব বন্ধুদের নামের তালিকা সংগ্রহের সুযোগ পেয়েছে মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিন। এদিকে বন্ধুদের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীর নাম ও যোগাযোগের তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারতো অ্যামাজন। সবশেষ এ গ্রীষ্মেও ফেসবুক ব্যবহারকারীর বন্ধুদের লাইভ স্ট্রিম দেখতে পেয়েছে ইয়াহু।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তথ্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে দেড় শতাধিক কোম্পানিকে সুবিধা দিয়েছে ফেসবুক। আর এর মধ্য দিয়ে ফেসবুকও তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে পেরেছে।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি, অ্যাপল, অ্যামাজন, ব্ল্যাকবেরি ও ইয়াহুর মতো অংশীদার কোম্পানিগুলো নির্মিত ডিভাইস বা প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে ব্যবহারকারীরা যেন তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিংবা বিশেষ ফিচারগুলোতে ঢুকতে পারেন তা নিশ্চিত করতেই এ কাজ করেছে তারা। ফেসবুকের দাবি, অংশীদার কোম্পানির অ্যাপ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ব্যবহারকারী ফেসবুকে সাইন ইন করলেই কেবল ওই কোম্পানি তার ব্যক্তিগত মেসেজ পড়তে পারতো।

অ্যাপের মাধ্যমে ফেসবুক সাইন করাকেই ফেসবুক ‘মানুষের অনুমতি সাপেক্ষে তথ্য সংগ্রহ’ বলতে চাইছে। ওই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ডেভেলপার প্ল্যাটফর্মস অ্যান্ড প্রোগ্রামস-এর পরিচালক কন্সটানটিনোস পাপামিলতিয়াদিস বলেন, ‘মানুষের অনুমতি ছাড়া তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের সুযোগ ব্যবসায়িক অংশীদারমূলক কোম্পানিগুলোকে দেয়নি ফেসবুক। ফেডারেল ট্রেড কমিশনের ২০১২ সালের সমঝোতাও এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয় না।’

প্রতীকী ছবি (ফেসবুক)
তথ্য আদান-প্রদানে কোম্পানির পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নীরিক্ষার ফলাফল হিসেবেই এ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতাটি করেছিল ফেসবুক। ২০০৯ সালের শেষ দিকে ৪০ কোটি ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি সেটিং পরিবর্তন করে দিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। এসব ব্যবহারকারীর কিছু কিছু তথ্য পুরো ইন্টারনেট জগতের কাছেই উন্মুক্ত ছিল। এরপর ব্যবহারকারীর লোকেশন, তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ বিভিন্ন তথ্য মাইক্রোসফট ও অন্য অংশীদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিময় করেছিল ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি এ প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছিল ‘ইন্সট্যান্ট পার্সোনালাইজেশন’। ইন্টারনেটকে আরও উন্নত করার প্রচেষ্টা হিসেবে একে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ ব্যবস্থার আওতায় বিং এর মতো সাইটগুলোতে মানুষ কী দেখছে তা সুনির্দিষ্ট করতে তথ্য ব্যবহারের সুযোগ পায় অন্য কোম্পানিগুলো। তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষায় কাজ করা আইনজীবীরা ও অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এর বিরোধিতা করে। তারা সেসময় অভিযোগ করে, অনুমতি ছাড়াই তথ্য আদান-প্রদান করেছে ফেসবুক।

ফেসবুকের দাবি, ২০১৪ সালেই ‘ইন্সট্যান্ট পার্সোনালাইজেশন’ প্রক্রিয়া তারা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, এ সেবা দিতে গিয়ে তারা যে সফটওয়্যার উপকরণগুলো স্থাপন করেছিল সেগুলো সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও সরানো হয়নি। সম্ভবত, এর মধ্য দিয়েই ডেভেলপাররা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির দাবি, ওই কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর তথ্যের ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার হওয়ার কোনও প্রমাণ তাদের হাতে নেই। ফেসবুক বলছে, অ্যাপল ও অ্যামাজন বাদে প্রায় সবগুলো কোম্পানির সঙ্গে কয়েক মাস আগে পার্টনারশিপ বাতিল করা হয়েছে।