মুক্তিযুদ্ধের গল্প
৭১’এর ছবি [তৃতীয় পর্ব ]
সাজিয়া আফরিন সোমা
নাহিল বাড়ি ফিরে আগে চা খায়, সে যত রাতই হোক না কেনো,ছবির হাতের চা সে মিস করতে চায় না। ছবিও জানে বলে যখনই নাহিল বাসায় ফিরে,সে চা নিয়ে হাজির হয়। নাহিল বাসায় ফিরে আজ চায়ের জন্য অস্থির। মেয়েটা কেনো যে যায়! ওকে না দেখলে,ওর সাথে ঝগড়া না করলে নাহিলের দিন একদম পার হয়না আর রাত তো কাটেই না। আজ নাহিল জইনিং লেটার হাতে পেয়েছে,খবরটা আগে ছবিকে দিবে তার পর বাড়ির সবাই কে। কিন্তু ছবিকে দিবে কি করে? সেতো বহু দূরে।
নাহিলঃ কি রে কেমন আছিস?
ছবিঃ বিকেলেই তো এলাম, তখন যেমন দেখেছো।
নাহিলঃ একদম সে রকমই থাকবি এবং সে রকমই ভাল ভাল ফিরবি। রিনি কেমন আছে? চকলেট পছন্দ হয়েছে?
ছবিঃ হু ভাল আছে চকলেট নিয়েই বসেছে এখন। তুমি চা খেয়েছো?
নাহিলঃ দিলি কই চা বানিয়ে।
ছবিঃ আমি কি আছি?
নাহিলঃ চলে আয় তো রিনিকে নিয়ে। কেনো মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস? ও আচ্ছা শোন, তোকে একটা খবর দিবো- জয়নিং লেটার হাতে পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে জয়েন করবো,এবার বল এতো দিন পরে মেয়েটাকে পেয়েও কেনো মন খারাপ তোর?
ছবিঃ কে বলেছে আমার মন খারাপ?
নাহিলঃ আমার মনে হচ্ছে, তাই বললাম। মা'র ডাকে ঘোর কাটলো নাহিলের। কি ভাবছে সে এসব একা একা!!! কিন্তু ছবির মন খারাপ এমন কেনো মনে হচ্ছে নাহিলের! ওর তো আনন্দে থাকার কথা,অনেকদিন পর মেয়েটাকে কাছে পেয়েছে।
মৌমিতা রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক পিছন থেকে কেউ নাম ধরে ডাকলো। মৌমিতা পিছনে তাকিয়ে ছেলেটিকে দেখতে পায়। আমি সাদিক,ছেলেটি বলে।
মৌমিতাঃ জি আমি জানি
সাদিকঃ আর কি কি জানো?
মৌমিতাঃ পাশের বাসায় থাকেন,কিছু একটা পড়েন।
সাদিকঃ হ্যা কিছু একটা তো পড়ি। তো কোথায় যাচ্ছো?
মৌমিতাঃ ক্লাসে
সাদিকঃ সেদিনের কথায় কি তুমি কিছু মনে করেছো? আমি আমার মনের কথাটা বলেছি হতে পারে একটু তাড়াতাড়ি। নিজের পরিচয়টাও দিতে পারিনি সেদিন।
মৌমিতাঃ আমার দেরি হচ্ছে,আজ আর সময় নাই,তবে আপনার মনের কথা আপনি বলতেই পারেন যাকে খুশি এটা আপনার অধিকার। আমি কি করবো সে আমার ব্যক্তিগত বিষয়। মৌমিতা হাটতে শুরু করে। সাদিক মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুদূর আসতেই নাহিলের সাথে দেখা মৌমিতার। সেও বাড়ির পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
মৌমিতাঃ নাহিল ভাই ছবি কবে আসবে?
নাহিলঃ জানি না কবে। পড়া লেখার চিন্তা আছে নাকি ওর,তাই যে আসবে?
মৌমিতা একটু হেসে চলে যায়।
নাহিল দাঁড়িয়ে আছে হিরন আসবে তাই তার অপেক্ষায়,ছেলেটা ফাজিল একটা,কোন সময় জ্ঞান নাই। কতো কাগজ পত্র রেডি করতে হবে,অথচ সময় কম। একটা কিছুতে ঢুকতে হবে যে করেই হোক,তবে তার আগেই না সব আবার হাতছাড়া হয়ে যায় সেই ভয়ও পেয়ে বসেছে নাহিলকে। তাই মেজাজটা খুবই খারাপ হয়ে আছে। মৌমিতা রিক্সয় যেতে যেতে ভাবতে থাকে সাদিক যে কথাগুলো ওকে বলেছিলো সেগুলো যদি নাহিল ভাই বলতো কত যে ভাল লাগতো! সেই কবে থেকে অপেক্ষায় আছে নাহিলের জন্য। একবার ভেবে ছিলো ছবিকে বলবে কিন্তু পরে ঠিক করেছে বলতে হলে নাহিল কেই বলবে প্রথমে। শুধু সময়ের অপেক্ষায়। কিন্তু সে মানুষটাও কেমন জানি! কিচ্ছু বোঝে না। অবশ্য বুঝতে দিলে তো বুঝবে? সেরকম কিছু তো হয়নি কখনও। এসব এলোমেলো ভাবনা ভাবতে ভাবতে কলেজে পৌঁছে যায় মৌমিতা। (চলবে…………)