নিত্যানন্দের মুখাগ্নিতে ইউএনও, স্যালুট সাদিকুর রহমান

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭১ বার।

ছবির এই চিতা কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়নের নারায়ণ খান গ্রামের নিত্যানন্দ বল্লভ (৬০) এর। তিনি মারা গেছেন বৈশ্বিক মহামারি করোনায়। গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিত্যানন্দ বাবু মারা যাবার আগেও তার পরিবার ছিল, সন্তান ছিল! মৃত্যু সংবাদ পেয়েই পালিয়ে যান সবাই।

পরিবারের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় সৎকারের দায়িত্ব নেয় গোপালগঞ্জে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। কিন্তু মুখাগ্নি করবে টা কে? এগিয়ে এলেন গোপালগঞ্জ সদরের তরুণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান খান। প্রচলিত ধর্মীয় চেতনা নয়, মানবতার মানবিক চেতনায় মৃতদেহের মুখাগ্নি করলেন তিনি।

খবরটি পড়ে একটু গর্বই হচ্ছিল। কারণ ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত মানুষ সাদিকুর রহমান খান। সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রিয়জন ড. বীরেন শিকদারের এপিএস থাকাকালীন সময়ে পরিচয় ঘটেছিল স্মার্ট এই কর্মকর্তার সাথে। আমার পাশের জেলা নড়াইলের মানুষ হিসেবে সংখ্যতা হয়ে উঠেছিল সে সময়। জেনেছিলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতার যোগ্য সন্তান সাদিকুর রহমানকে।

এবছর ১৪ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগের দিন টুঙ্গিপাড়ায় পেয়েছিলাম বন্ধুবৎসল এক সাদিক ভাইকে। যখন সেদিন টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছায় তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে এসএসএফ। তাদের পাস ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। হঠাৎ দেখি দাঁড়িয়ে আছেন সাদিক ভাই। নাম ধরে ডাক দিতেই তাকিয়ে হেসে দিয়ে ইশারা করলেন ভেতরে ঢুকতে। আমরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নিজেই বেরেয়ে এলেন গেটের বাইরে। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাদের নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন উপজেলা পরিষদের দিকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের মহাব্যস্ততার মাঝেও আদর-আপ্যায়নে কমতি রাখলেন না। কতটুকু মানুষের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে এটা করা সম্ভব তা অনুধাবনের বিষয়।

এবার গণমাধ্যমে পেলাম আরেক সাদিকুর রহমানকে। শেষ যাত্রায় একজন মানুষের সৎকার নিয়ে যখন অনিশ্চয়তায়, তখন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি হয়তো সৎকারের ব্যবস্থা করেই দায় সাঁরতে পারতেন। না, তিনি তা করেন নি। শশ্মানে নিজে উপস্থিত হয়ে অন্য ধর্মের একজন মানুষের মুখাগ্নি করেছেন তিনি।

প্রচলিত ধর্ম ব্যবস্থা অনুযায়ী ইউএনও সাদিকুর রহমান আর প্রয়াত নিত্যানন্দ একই ধর্মের না হলেও মানবিক সাদিকুর রহমান মানবতার ধর্মের যে ঝান্ডা উড়িয়েছেন তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সংবিধান, বাঙালির চেতনাকে সম্মানিত করেছে। এমন মানুষের সাথে পরিচয় থাকাটাও গর্বের। স্যালুট মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রিয় সাদিকুর রহমান। আপনাদের মতো মানবতাবাদীদের হাত ধরে মানবিক ধর্ম প্রতিষ্ঠা পাক বিশ্বজুড়ে...

উল্লেখ্য, রোববার (২৮ জুন) বিকালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার শ্মশানে এই সৎকার সম্পন্ন হয়। শনিবার (২৭ জুন) বিকেলে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মারা যান কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়নের নারায়ণ খান গ্রামের নিত্যানন্দ বল্লভ (৬০)। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ায় মরদেহ সৎকারে কেউ এগিয়ে আসেননি। ছেলে পিতার মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে চলে যায়।

অবশেষে রোববার বিকেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিকুর রহমান খান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সৎকারের ব্যবস্থা করেন। মুখাগ্নি করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিজেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নিত্যানন্দ বল্লভ গত ৬ জুন কোটালীপাড়া থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত মল্লিক ও সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিত্যানন্দের মৃত্যু হয়। আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার ছেলে কাগজপত্রে মরদেহ বুঝে নিলেও পরে তা হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়।

লেখক: শাহিদুল হাসান খোকন, সাংবাদিক, ইন্ডিয়া টুডে টেলিভিশন।