বগুড়ায় ‘রেড জোন’ করেও করোনার সংক্রমণ কমানো গেল না
স্টাফ রিপোর্টার
বগুড়া শহরের ৯টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করেও করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। পরিসংখ্যান বলছে, ‘রেড জোন’ ঘোষিত এলাকাগুলোতে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। কোন কোন এলাকায় তো করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার ২৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন এমন হলো- তার উত্তর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা প্রশাসন স্পষ্টভাবে দিতে পারেনি। অবশ্য সচেতন নাগরিকরা মনে করেন ‘রেড জোন’-এর ঘোষণাটি শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ‘রেড জোন’-এর ভেতর থেকে প্রয়োজন ছাড়া কারো বেরুনো কিংবা সেখানে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে কার্যকর কোন তদারকি না থাকায় মানুষ অবাধে যাতায়াত করেছে। আর সে কারণেই করোনার সংক্রমণ না কমে উল্টো বেড়েছে।
বগুড়ায় গত ১ এপ্রিল প্রথম কোন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হন। তারপর থেকে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে ১০ মে মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলো খুলে দেওয়ার পর তা লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে এবং ১০ জুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারিশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্তের হার বেশি শহরের- এমন ৯টি মহল্লাকে ১৪ জুন থেকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়। এগুলো হলো- চেলোপাড়া, নাটাইপাড়া, সুত্রাপুর, নারুলী, ঠনঠনিয়া, হাড়িপাড়া, মালতিনগর, জলেশ্বরীতলা ও লতিফপুর (কলোনী)। রেড জোনের আওতাভুক্ত ওই মহল্লাগুলোতে ‘লকডাউন’ কার্যকরের জন্য সবগুলো প্রবেশপথে বেরিকেডও দেওয়া হয়। প্রথম দফায় ঘোষিত ‘রেড জোন’-এর মেয়াদ ৫ জুলাই পর্যন্ত রাখা হলেও করোনার সংক্রমণ না কমায় পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ২১ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা বগুড়ার স্থানীয় একটি সংগঠন ও স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দু’ দফায় ‘রেড জোন’ ঘোষিত ওই ৯টি মহল্লায় টানা ৩৮দিন ‘লকডাউন’ রাখা হলেও করেনার সংক্রমণ কমেনি বরং বেড়েছে। যেমন শহরের চেলোপাড়া মহল্লাকে রেডজোনের আওতাভুক্ত করার আগ পর্যন্ত সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৪ জন। আর ‘রেড জোন’-এর শেষ দিন ২১ জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১১৮জন। একই সময়ের মধ্যে সুত্রাপুর মহল্লায় করোনা আক্রন্তের সংখ্যা ২৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৬। বৃদ্ধির হার ২৮৪ শতাংশ। একইভাবে শহরের অভিজাত জলেশ্বরীতলা মহল্লায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ থেকে ৯৮, নারুলীতে ২৬ থেকে ১০০, নাটাইপাড়ায় ২৯ থেকে ৬৯, ঠনঠনিয়ায় ৩৬ থেকে ১১২, মালতিনগরে ৪৬ থেকে ১০৭, লতিফপুরে (কলোনী) ২৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৯জন।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বগুড়ার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুর রহমান হেলালের অভিযোগ ‘রেড জোন’-এর ঘোষণা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি যথাযথ কার্যকরের জন্য তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বগুড়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এটা রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মধ্যে সর্বাধিক। এমনকি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। যদি কঠোর কোন পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’
জানতে চাইলে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ জেলায় নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে করোনা সনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে- এটা একটা কারণ বলে আমরা মনে করছি। তবে আরও যেসব কারণ রয়েছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণে আজ বিকেলে (মঙ্গলবার) জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসবো।’ এমন পরিস্থিতিতে রেড জোন-এর মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কি’না জানতে চাইলে বগুড়ার নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’