বগুড়ায় শেষ সময়ে জমে উঠেছে পশুর হাট

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২০ ১১:২৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৭২ বার।

বগুড়ায় শেষ সময়ে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। দাম ছাড়ছেন না বিক্রেতা। মেঘ ও রোদের লুকোচুরির মধ্যেই বগুড়ায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। চলছে দর কষাকষি ও বেচাকেনা।
 

অল্প সময়ের মধ্যেই কোরবানির পশু কেনার কাজ সারতে হবে। কেননা হাতে আর সময় নেই। একটু দেখে-শুনেই কোরবানির পশু কিনতে চান ক্রেতারা। হাটে মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে দাম ছাড়তে নারাজ বিক্রেতারা। আবার দামদরে মিলে গেলেই পশু নিয়ে হাট ছাড়ছেন ক্রেতারা।
 

শুক্রবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বগুড়া শহরের বনানী এলাকায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জ পশুর হাটে গিয়ে এমন দৃশ্য নজরে পড়ে।
 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ সন্নিকটে এসছে। আর তাই শুক্রবার বেলা ১২ টা থেকেই হাটে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পশুর হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধীরে ধীরে কোরবানির পশু আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ভর্তি করে ও হেঁটে নিয়ে আসা পশুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। একটা থেকে দু’টার মধ্যেই হাটের প্রায় পুরোস্থানই কোরবানির পশু দিয়ে ভরে যায়। বলা চলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে ওঠে কোরবানির পশুর হাট।
 

সরেজমিনে দেখা যায়, হাটের প্রধান ফটক দিয়ে হাটের ভেতরে প্রবেশ করে কিছু দূর যেতেই অসংখ্য গরুর মাঝে দেখা মিললো বেশ কয়েকটি বড় আকারের ষাঁড়ের। এ স্থানে হাটের বড় বড় ষাঁড়ের বেচাকেনা হয়ে থাকে। ষাঁড়গুলোর মালিকরা দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ষাঁড়গুলো দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতারাও। কেউ কেউ নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। বড় ও বেশি দামের গরু কেনার মতো ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। তাই বড় আকারের গরুর মালিকরা একটু বিপাকেই পরেছেন। তাই অনেকেই খুব সামান্য লাভেই তাদের পশুটি বিক্রি করতে চান।
 

ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি ষাঁড়ের মালিক আনছার মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তার ষাঁড়গুলোর দাম চাওয়া সাড়ে তিন লাখ টাকা। ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দাম উঠেছে। তবে ২ লাখ ৮০ হাজার হলে ছেড়ে দেবেন।
 

হাটে মাঝারি আকারের চারটি ষাঁড় নিয়ে আসা গাবতলী উপজেলার আমজাদ মোল্লা জানান, এ বছর তার বাড়িতে ৭টি মাঝারি আকারের ষাঁড় প্রস্তুত হয়েছে। গেল মঙ্গলবার তরনীর হাটে তিনটি বিক্রি করেছেন। বাকি চারটি নিয়ে এ হাটে এসেছেন। পালন করা তার ষাঁড়ের প্রত্যেকটির দাম চাওয়া ৮০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে দামদরের মাধ্যমে এর কম হলেও বিক্রি করে দেবেন।  
 

তিনি জানান, এ পর্যন্ত দু’জন ক্রেতা তার ষাঁড়গুলোর দাম করেছেন। এরমধ্যে বড় দুটির দাম একজন ৭৫ হাজার ও আরেকজন ৯০ হাজার টাকা বলেছেন। হাটে আসা বেশিরভাগ ক্রেতার চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মাঝারি আকারের গরু এমন মন্তব্যও করেন তিনি। 

 

সালেহ, রমজান আলী, কামরুজ্জামান, সোবহান নামে কয়েকজন ক্রেতা জানান, হাটে প্রবেশ করার পরপরই তারা সাধারণ ক্রেতারা মাঝারি আকারের গরুর দিকেই ছুটে যান। হাটে আসা বেশির ভাগ ক্রেতারই বাজেট ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে। আবার অনেক ক্রেতাই ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির পশু কিনতে হাটের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ঘোরাঘুরি করছেন।
 

তারা জানান, মাঝারি আকারের গরুর প্রতি ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক থাকায় বিক্রেতারা অনেকটা সুযোগ নিচ্ছেন। ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন। ফলে কোরবানির পশু কিনতে ব্যাপক দরদাম করতে হচ্ছে।
 

এদিকে করোনাকালে বগুড়ায় পশুর হাটগুলোতে সামাজিক দুরত্বের কোন বালাই নেই। হাটগুলোর বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক মাইর্কিং করা হলেও তা মানছেন না কেউই। ক্রেতাদের অনেকেই হাটের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছেন আর পশুর দাম করছেন।
 

এ বছর বগুড়ায় গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়। খামারি ও পশু পালনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
 

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪০ হাজার ৮শ’ ৯ জন খামারি মোট ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ’ ৭৭টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তোলেন।
 

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ হাজার ৫০৩টি, গাবতলীতে ৩১ হাজার ৪৪৫টি, সারিয়াকান্দিতে ৩৪ হাজার ৫৫৭টি, সোনাতলায় ২৫ হাজার ৭৪৭টি, শিবগঞ্জে ৪১ হাজার ৪৩টি, কাহালুতে ২৬ হাজার ৫৭৮টি, দুপচাঁচিয়ায় ৩০ হাজার ১৬৪টি, আদমদীঘিতে ২৫ হাজার ৮১২টি, নন্দীগ্রামে ২২ হাজার ২৭২টি, শেরপুরে ৩৯ হাজার ৯৫০টি, ধুনটে ৩২ হাজার ৫৮৮টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় ২৫ হাজার ৯১৮টি।

এ পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বদল ও গাভি) ২ লাখ ৫০ হাজার ৮শ’ ৫২টি, মহিষ ২ হাজার ৮শ ১৩টি, ছাগল ১ লাখ ৩ হাজার ২শ’ ৫২টি এবং ভেড়া ১৯ হাজার ৬শ’ ৬০টি।
 

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির হাট লাগার আগে থেকেই ভীষণ চিন্তিত ছিলেন খামারিরা। জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৩৮টির মতো এবং অস্থানী আরও ৪০ টি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ পর্যায়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশুগুলো বিক্রি চলছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট পরিচালনার জন্য হাট ইজারাদারদের বার বার সচেতন করা হয়েছে।
 

জেলার কোরবানিযোগ্য ছোট-বড় গবাদি পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসছে এমন মন্তব্যও করেন এই কর্মকর্তা।